ইসরো স্পেস এগজিবিশন। নিজস্ব চিত্র
ফি-বছর মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিকের ফলে কলকাতাকে টেক্কা দেয় জেলার স্কুল। এ বার কলকাতার বিধান শিশু উদ্যানে অনুষ্ঠিত ‘ইসরো স্পেস এগজিবিশন’-এও কলকাতার সব স্কুলকে টপকে প্রথম হল হরিণঘাটার নগরউখরা হাইস্কুল।
সম্প্রতি ওই স্কুলের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের দুই ছাত্র রিদম ভৌমিক ও চয়ন দেবনাথের তৈরি মডেল সেরা হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। স্বীকৃতি স্বরূপ আয়োজক সংস্থা ওই দুই ছাত্রের হাতে মেডেল ও শংসাপত্র তুলে দিয়েছে।
খোদ কলকাতার পড়ুয়াদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে সেরার সম্মান ছিনিয়ে আনা মুখের কথা নয়, মানছেন জেলার স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। যে ভাবে বিজ্ঞান বা অন্য বিষয়ে আরও জানার, নতুন নতুন বিষয় আত্মস্থ করার সুযোগ শহরের ছাত্রছাত্রীদের কাছে থাকে, তার অনেকটাই গ্রামের পড়ুয়াদের হাতের বাইরে। তাই প্রতিযোগিতায় ওই দুই ছাত্রের সাফল্য জেলার পড়ুয়ারদের শহরের তাচ্ছিল্য করা মনোভাবের উপযুক্ত জবাব বলেই মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের আশা, আগামী দিনে জেলার থেকে উঠে আসবে আরও এমন অনেক প্রতিভা। যারা তাদের মেধা এবং পরিশ্রম দিয়ে কাটিয়ে উঠবে জেলা স্কুলের যাবতীয় পরিকাঠামো-জনিত প্রতিবন্ধকতা।
সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকের ওই প্রদশর্নীতে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণপত্র আসে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশীতাভ ভট্টাচার্য জানান, আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কথা বলেন মেধাবি ও বিজ্ঞানমুখী স্কুলের ওই দুই ছাত্রের সঙ্গে। ওই দু’জন পড়ুয়াও মডেল বানানোর জন্য আগ্রহ দেখায়। বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় বিজ্ঞান শিক্ষক রামচন্দ্র বিশ্বাসকে।
ওই দুই ছাত্র তিন পর্বে মডেল বানিয়ে প্রদর্শনীতে যোগ দেয়। যার একটিতে তুলে ধরা হয় ইসরো-র ইতিহাস, সংস্থাটি কবে তৈরি হয়েছে, কী ভাবে মহকাশ গবেষণার পথিকৃৎ এই সংস্থার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তন হচ্ছে। এই দেশের মহাকাশ গবেষণায় ইসরো-র অবদান পোস্টারের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। দ্বিতীয় পর্বে, ইসরো-র পাঠানো বিভিন্ন স্যাটেলাইট কী ভাবে মহাকাশে গিয়ে কাজ করে, তারা কী ধরনের ছবি-তথ্য পাঠায় ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মানুষ কী ভাবে উপকৃত হয়, তা তুলে ধরা হয় মডেলের দ্বিতীয় অংশে। তৃতীয় পর্বে একটি জলের বোতলকে ব্যবহার করে দেখানো হয় মহাকাশের উদ্দেশে কী ভাবে রকেট যাত্রা করে। আর এই কাজ দেখেই অভিভূত হয়ে পড়ে বিচারকমণ্ডলী। নগরউখড়া স্কুলের পড়ুয়াদের তৈরি মডেলটিকে সেরা বলে ঘোষণা করা হয়।
রামচন্দ্রবাবু জানাচ্ছেন, ওই প্রদর্শনীতে ইসরো-র তৈরি একটি মডেলও ছিল। আয়োজক সংস্থা স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার, আমেদাবাদ ওই মডেলটি তৈরি করেছিল। তিনি বলেন, ‘‘মহাকাশ গবেষণার অনেক বিষয়কেই মডেলের মাধ্যমে প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছিল। ইসরো-র কয়েক জন বিজ্ঞানীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমাদের স্কুলের ছেলেরা সেই বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেয়েছে।’’
আর তিন দিন ধরে কলকাতায় থাকার পরে চয়নের উপলব্ধি একেবারে ভিন্ন মাত্রার। তার কথায়, ‘‘আমাদের স্কুল তো নদিয়ার একেবারে শেষ সীমানায় অবস্থিত। সদর শহর কৃষ্ণনগরেই এর আগে কখনই পা দেওয়ার সুযোগ হয়নি। প্রথমে কলকাতায় এসে ভেবেছিলাম, হেয়ার, হিন্দু, যাদবপুর বিদ্যাপীঠের স্কুলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দেওয়া সম্ভব হবে কি না। কিন্তু শেষমেশ যখন আমাদের মডেলটাই সেরা হল, তখন বুঝলাম, চেষ্টা করলে আমরাও পারি।’’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশীতাভ বলেন, ‘‘ছাত্রদের সব সময়ই উৎসাহ দিই। অনেক সময় এলাকার প্রাক্তন কৃতি ছাত্রদের স্কুলে নিয়ে এসে দেখাই, ওঁরা এই গ্রামের স্কুল থেকে পড়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে তোমরাও পারবে। এতে ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।’’ তাঁর মতে, এরই ফলশ্রুতি শহরকে পিছনে ফেলে জেলার স্কুলের এই সেরার সেরা সম্মানপ্রাপ্তি।