তাঁরা হাসপাতালে নেই, আবার আছেন।
কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে অভিযোগটা উঠছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। মঙ্গলবার, প্রশ্নটা উঠে গেল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকেও।
আউটডোরে চিকিৎসকেরা থাকেন না, দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের কাছে যেমন অভিযোগ প্রায়ই শুনতে হয় হাসপাতালের সুপারকে। অথচ সেই চিকিৎসকেরই দিব্যি ধেখা মিলছে রেল স্টেশন লাগোয়া ওষুধের দোকানে। সঙ্গে রয়েছে চিকিৎসকদের দুর্ব্যবহার থেকে ‘দামী’ ওষুধ লিখে দেওয়ার রেওয়াজের নিত্য অভিযোগ।
পালাবদলের পরে কল্যাণীর এই হাসপাতালের স্বাস্থ্যোদ্ধারের চেষ্টা শুরু হয়। গত দু’বছরে হাসপাতালের জন্য দু’কোটি টাকাও অনমোদন করা হয়েছে। কেনা হয়েছে উন্নত যন্ত্রপাতি।
হাসপাতালের পরিরাঠামোর উন্নয়নের সঙ্গে পরিষেবারও পরিবর্তন হয়েছিল। বছর দুয়েক আগেও সাড়ে তিনশো বেডের হাসপাতালে গড়ে রোজ ৫০ জন রোগী ভর্তি থাকত। মাস কয়েক আগে বাইপাস এবং ওপেন হার্ট অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছিল। মাসখানেক আগে করোনারি বাইপাস (হৃদযন্ত্র চালু রেখে) অস্ত্রোপচারও হয়েছে। এখন গড়ে অন্তত আড়াইশো রোগী ভর্তি থাকে।
স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রে বলছে, এর ফলে এক শ্রেণির চিকিৎসকেরা পড়েন বিপদে। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের অনেক সময় দিতে হচ্ছে হাসপাতালে। তার ফলে তাঁদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস লাটে ওঠে। অভিযোগ, তারা হাসপাতালে আসা রোগীদের নানাভাবে নিরুৎসাহিত করতে থাকেন তাঁদের একটা অংশ। আউটডোরে ডাক্তারবাবুদের দেখা মিলছে না।
গাঁধী মেমোকিয়ালের সুপার সুবিকাশ বিশ্বাস স্পষ্টই জানান, এ ব্যাপারে প্রায় পঞ্চাশটি অভিযোগ জমা পড়েছে ইতিমধ্যেই।
মাসখানেক আগে চাপড়ার জোনাথন মণ্ডল হাঁপানি নিয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে এই হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসক মিরাজ মণ্ডলের অধীনে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু, অবস্থা খারাপ হতে থাকে। প্রথম দিনের পর মিরাজকে আর পাওয়া যায়নি। অন্য চিকিৎসকরা তাঁর ‘কথা মতোই’ চিকিৎসা চালাতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সামান্য অস্ত্রোপচারে এক দিনের চিকিৎসাতেই তিনি সুস্থ্ হন।
তাঁর যে কী হয়েছে, বাড়ির লোককে চারদিনে তা জানাতে পারেননি চিকিৎসকরা। জানতে চাইলে নৃপেন বিশ্বাস নামে এক হাউস স্টাফ জোনাথনবাবুর বাড়িক লোককে হুমকি দেন, ‘‘আপনাদের লিখিত দিতে হবে যে, আপনারা বিভিন্ন পরীক্ষা করাননি বলেই তাঁর অবস্থা খারাপ হয়েছে।’’
চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মুকুল রায়ের কাছেও পৌঁছেছে। সোমবারই তিনি বৈঠকে বিষয়টি তোলেন। তিনি নির্দেশ দেন, কড়া হাতে এর মোকাবিলা করা হবে। অভিযোগ উঠলে কাউকেই রেয়াত করা হবে না।