দত্তক-বিধি জানেন তো ভারপ্রাপ্তরা

মুর্শিদাবাদের সিডব্লিউসি চেয়ার পার্সন শবনম রামস্বামী রাখঢাক রাখছেন না। বলছেন, ‘‘কী বলব বলুন তো, পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের ক’জন দত্তকের আইন-বিধি অনুপুঙ্খ জানেন, আমার তো সন্দেহ রয়েছে!’’

Advertisement

সুস্মিত হালদার ও শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ১৪:০০
Share:

লজ্জা-সঙ্কোচ আর সংস্কারের পাঁচিল ভাঙা কি সহজ কথা!

Advertisement

মা না হয় কষ্ট বুকে চেপে সদ্যোজাতকে তুলে দিলেন অন্যের হাতে। দত্তকের নিয়ম লুটলো ধুলোয়। কিন্তু সিডব্লিউসির সদস্যরা, দত্তকের নিয়ম-বিধি জানেন তো সকলে?

মুর্শিদাবাদের সিডব্লিউসি চেয়ার পার্সন শবনম রামস্বামী রাখঢাক রাখছেন না। বলছেন, ‘‘কী বলব বলুন তো, পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের ক’জন দত্তকের আইন-বিধি অনুপুঙ্খ জানেন, আমার তো সন্দেহ রয়েছে!’’

Advertisement

সরকারি কর্তারাই জানাচ্ছেন, সমস্যাটা পেকে উঠেছে ছ’বছর আগে রাজ্যে পালাবদলের পরে। নব্য জমানায় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি ঢেলে সাজার পরে পুরনো যাঁরা ছিলেন তাঁদের বিদায়ী-চিঠি ধরানো হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এই দায়িত্ব সামাল দিয়ে আসা সেই সব দত্তক-বিশেষজ্ঞদের জায়গায় যাঁরা এসেছেন তাঁদের অনেকের এ বিষয়ে সম্যক জ্ঞান নেই।

প্রতি জেলায়, পাঁচ সদস্যের ওই কমিটিতে দু’জন সরকার মনোনীত। যাঁরা হয় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী না হয় শিক্ষক। দত্তক সম্পর্কিত কোনও ধারণাই তাঁদের অনেকের নেই। ফলে ‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’ রয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন নদিয়ার জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা পরিচিত আইনজীবী অসীম সাহা। তিনি বলেন, ‘‘আরে বাবা, দত্তক দেওয়ার আইনটা তো জানতে হবে। সিডব্লিউসি-র সদস্যদের সকলেই তা জানেন কিনা তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে!’’ ঘরের রোগ সামলে সিডব্লিউসি-র ভরসা প্রচার। কৃষ্ণনগর আদালতের সরকারি প্লিডার গুরুপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দত্তক সংক্রান্ত আইনের তেমন প্রচার না থাকায় ঘাটতি রয়ে গিয়েছে। দত্তক দেওয়া এবং নেওয়ার প্রশ্নে আইনি প্রচারটার খুব দরকার।’’ নদিয়া জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেছেন, “কন্যাশ্রী বা অন্য সরকারি প্রকল্পের প্রচারের সঙ্গে বিষয়টা জুড়ে দেব।”

সরকারি নিয়মকানুন মেনে শিশুসন্তান ‘দত্তক’ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সচেতনতার অভাবের কথা মেনে নিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। শবনম জানান, পঞ্চায়েত সদস্য, আশা কর্মী, কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের নিয়ে কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে একাধিকবার। সপ্তাহে এক দিন এ ব্যাপারাটা নিয়ে রেডিও-তে প্রচার চালানো দরকার বলেও প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তিনি। এখন প্রশ্ন দত্তক নেওয়ার নিয়মটা ঠিক কি?

সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে—জন্মদাতা বাবা-মা যদি তাদের সন্তানকে অন্য কোন দম্পতিকে দত্তক দিতে চান, তা হলে আইনজীবীর মাধ্যমে জেলা জজের কাছে ‘হিন্দু অ্যাডপশন অ্যান্ড মেনটেনেন্স অ্যাক্ট’ বিষয়ে আবেদন করতে হবে। জেলা জজ দেখবেন যে যাঁরা দত্তক দেওয়ার জন্য আবেদেন করছেন তারা মানসিক ও শারীরিক ভাবে যোগ্য কি না। অর্থনৈতিক ভাবে তাদের সন্তান প্রতিপালনের ক্ষমতা আছে কি না। এর পর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে দিয়ে যারা দত্তক দিতে চান, তাদের বাড়ি পাঠিয়ে ‘হোম স্টাডি’ করানো। রিপোর্টের ভিত্তিতে জিপির মত শুনে রায় দেবেন বিচারক। নদিয়ার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন রিনা মুখোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দত্তকের আগে শিশুকে রাখাতে হবে, স্টেট অ্যাডাপশন রিসোর্স অথরিটির হোমে। সেখানে দু’মাস অপেক্ষা করা হয় জন্মদাতা বাবা-মায়ের মত পরিবর্তন হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য। দত্তকের প্রশ্ন তার পরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন