বানভাসি কেরলে যাতায়াতের ভরসা নৌকো। —নিজস্ব চিত্র।
বছর পনেরোর তহমিনা তাকিয়ে আছে, বাবা কবে ফিরবে। বৃদ্ধা জাহেদা বিবি চৌকাঠে বসে দিন গুনছেন, ছেলে ফিরবে তো! আর মলিনা বিবি সন্তানদের নাগাড়ে মিছি মিছি বলে চলেছেন, ‘‘দ্যাখ কেনে বাবা ফিরলেই নতুন জামা!’’
ইদের মুখে এটাই জ্যান্ত বাস্তব ডোমকলের বিভিন্ন গ্রামে। বানভাসি কেরলে আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবারগুলি, হাজার মাইল দূরে গ্রামের উঠোনে এমন ছটফট করছেন। ইদের আগে বন্য কবলিত কেরল থেকে ডোমকলের হাজার হাজার শ্রমিকের ঘরে ফেরা নিয়ে এই অনিশ্চয়তায় কান্না আছে, কষ্ট আছে আর আছে আশা।
শেষবার ফোনে যোগাযোগের সময়ে আটকে পড়া শ্রমিকদের কেউ জানিয়েছিলেন, ‘‘ফোনের চার্জ শেষ। বিদ্যুৎ নেই, জানি না কি করে যোগাযোগ করব।’’ কারও শেষ কথা ছিল, ‘‘একটা ছাদে বসে আছি গো, তিন দিন খেতে পাইনি!’’ জাহেদা বলছেন, ‘‘ঘরের লোকটা এ ভাবে কতা বললে মুখে কিছু তোলা যায়!’’
শুক্রবার ডোমকলের বিডিওর কাছে শতাধিক পরিবারের সদস্যরা এসেছিলেন। সবার একটা দাবি— কেমন আছে, একটু খোঁজ নিয়ে জানান। নিজেদের পরিচয়পত্র জমা দিয়ে যেতে বলা হয়েছে তাঁদের। সে টুকুই ভরসা। ডোমকলের মোমিনপুর গ্রামের জাহেদা বলছেন, ‘‘ছেলে জামিআল সাবির প্রায় বছর খানেক থেকে কেরলের এর্নাকুলামে থাকে। এ বার ইদে ঘরে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এখন কি হবে সেটাই বুঝতে পারছি না। তিন দিন আগে ফোনে বলেছিল তারা যে বাড়িতে থাকে তার এক তলা পুরো ডুবে গিয়েছে, দোতলার একটা ঘরে কোনওক্রমে না খেয়ে আছে।’’ ডোমকলের টিকটিকি পাড়ার বৃদ্ধ মা রহেলা বিবিও এসেছেন প্রশাসনের দরবারে। তার ছেলে মোজাক্কির সেখও পড়ে আছে কেরলে। ছেলে কেরলের কোন এলাকায় থাকে তাও জানা নেই তাঁর। ছেলের আধার কার্ড হাতে নিয়ে পাগলের মত ঘুরছেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। ভাই আমিনুলের জন্য একই ভাবে চিন্তায় যুগিন্দা গ্রামের আসমাতুল্লা। তিনি বলছেন, ‘‘কী করব সেটাই বুঝতে পারছি না। খাবারটা জুটল কিনা সেটাও বুঝতে পারছি না। প্রশাসনের কাছে এসেছি যদি কোনও সুরাহা হয়।’’ ডোমকলের বিডিও সোয়াং গ্যাটসো ভুটিয়া বলেন, ‘‘আমরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের ব্লকের বহু শ্রমিক থাকেন সেখানে। আমরা জেলা শাসকের নির্দেশে শ্রমিকদের পরিচয় ও ফোন নম্বর এবং তাদের ঠিকানা নিয়ে পাঠাচ্ছি।’’ দিন কয়েক আগে কেরল থেকে ঘরে ফিরেছে ডোমকলের হাসানপুর এলাকার মহম্মদ পিয়ার। বলছেন, ‘‘মাস চারেক আগে কেরলের কন্নুর গিয়েছিলাম রাজমিস্ত্রির কাজে। ইদের জন্য দিন কয়েক আগে ফিরেছি। আমি ফেরার সময়েও চারপাশে জল আর জল।’’