ফরেন্সিক রিপোর্ট পেয়ে দাবি পুলিশের

খুন নয়, ডুবেই মৃত্যু দুই পড়ুয়ার

ফরেন্সিক রিপোর্টেই জট খুলল রহস্যের। খুন নয়, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল দুই পড়ুয়ার। রিপোর্ট হাতে পেয়ে তেমনিই জানাল পুলিশ। স্কুলে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল রঘুনাথগঞ্জ হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র দুর্গাদাস চক্রবর্তী (১৪) ও সায়ন্তন সরকার (১৪)। তারপর আর তারা বাড়ি ফেরেনি। সেই দিনই রঘুনাথগঞ্জ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি দুই ছাত্রের পরিবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০১:৩১
Share:

দুর্গাদাস চক্রবর্তী ও সায়ন্তন সরকার— নিজস্ব চিত্র

ফরেন্সিক রিপোর্টেই জট খুলল রহস্যের। খুন নয়, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল দুই পড়ুয়ার। রিপোর্ট হাতে পেয়ে তেমনিই জানাল পুলিশ। স্কুলে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল রঘুনাথগঞ্জ হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র দুর্গাদাস চক্রবর্তী (১৪) ও সায়ন্তন সরকার (১৪)। তারপর আর তারা বাড়ি ফেরেনি। সেই দিনই রঘুনাথগঞ্জ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি দুই ছাত্রের পরিবার। পরে স্কুল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই-পুকুরের পাশে এক জলাশয়ে মধ্যে দু’জনের দেহ মেলে।

Advertisement

২০১৪ সালের জুলাই মাসে এ ভাবে দুই ছাত্রের মৃত্যুতে শহর জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। অভিভাবক-পড়ুয়াদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। দেহ উদ্ধারের পর সেই আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের হাজিরাও কমতে শুরু করে।

দুর্গাদাস শহর লাগোয়া বাহাদিনগর গ্রামে মামার বাড়িতে থাকত। সায়ন্তনের বাড়ি ঘোড়শালা গ্রামে। দু’জনেই ছিল অন্তরঙ্গ বন্ধু। তাদের খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। স্কুলেরই কয়েকজন সহপাঠীর দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে। ধন্দে পড়ে পুলিশও।

Advertisement

দফায় দফায় ওই দুই ছাত্রের বন্ধুদের থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। দু’জনের দেহ শনাক্তের পরে পুলিশ থানাতেও নিয়ে যায় কয়েকজন বন্ধুকে। জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ তাদের ছেড়ে দিলেও পুলিশের অনুমতি ছাড়া তারা যেন বাড়ি ও শহর ছেড়ে কোথাও না যায় সেই বিষয়ে সতর্ক করা হয়। মৃতদের পরিবারও পুলিশের কাছে বার বার দাবি জানায়, দুই ছাত্রের মৃত্যুতে তাদের বন্ধুদের যোগ রয়েছে। এতে সহপাঠীরাও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। পুলিশ অবশ্য ওই দুই ছাত্রকে যে খুন করা হয়েছে তা মানতে চায়নি। কারও বিরুদ্ধে খুনের মামলাও রুজু করেনি।

তবে ঘটনার প্রায় দেড় মাস পরে সায়ন্তনের মামা সুনীল লাল জঙ্গিপুর আদালতে খুনের তদন্তের দাবি করেন। পুলিশও সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর ৩০২ ও ২০১ ধারায় সরাসরি খুনের মামলা রুজু করতে বাধ্য হয়। ফলে দুজনেরই ‘ভিসেরা’ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় কলকাতায় রাজ্য সরকারের ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে। সেই ফরেন্সিক রিপোর্ট গত সপ্তাহে পুলিশের হাতে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, রিপোর্টে দুই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বি চৌধুরী ও এস কে সাহা জানিয়েন, দু’জনেরই ভিসেরায় ইথাইল অ্যালকোহল বা কোনও বিষ মেলেনি। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে ময়না তদন্তের রিপোর্টেও ‘দুই ছাত্রেরই জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে’ বলে বলা হয়েছে।

স্বভাবতই রঘুনাথগঞ্জে এক সময় সোরগোল ফেলা দুই ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে রহস্য কাটিয়ে খুনের মামলায় ইতি টানছে পুলিশ। ফরেন্সিক রিপোর্টে অভিযোগ মুক্ত হওয়ায় সন্দেহের তীরে বিদ্ধ সহপাঠীরাও হাঁফ ছেড়েছে।

এক বন্ধু বলেন, “দু’জনেই খুব ভাল বন্ধু ছিল। কিন্তু উল্টে আমাকেই সন্দেহ করায় ভেঙে পড়েছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন