ত্র্যহস্পর্শে চুপসে পুজোর বাজার

ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পুজোর মুখে বৃষ্টি এই প্রথম নয়। তবে সেই এক অসুরকে সামলাতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয়। এ বার তো তিনটে অসুর। পুজোর বাজার নিয়ে তাঁরা মোটেই উচ্ছ্বসিত নন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:১৯
Share:

ঝিমোচ্ছে বহরমপুরের একটি বাজার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

আশঙ্কাই সত্যি হল!

Advertisement

ভাঙন, এনআরসি আতঙ্ক ও বৃষ্টির ত্র্যহস্পর্শে চুপসে গিয়েছে পুজোর বাজার। গাঁ-গঞ্জ থেকে মফস্সল কিংবা শহরের বাজার এই সময়ের অপেক্ষায় থাকে। এই সময় কর্মসূত্রে ভিনদেশে থাকা ছেলেরা বাড়ি ফেরে। ঘরে ওঠে পাট। চাষির হাতে টাকা আসে। জমে ওঠে পুজোর বাজার।

সেই চেনা তালটা কেটে গিয়েছিল এ মাসের শুরুর দিকে। এনআরসি-আতঙ্কে পুজো ভুলে লোকজন ভিড় জমাতে শুরু করেন সরকারি দফতরে। বৃষ্টির অভাবে পাটের অবস্থা এমনিতেই ভাল নয়। যে পাট উঠেছে তার বাজারও তথৈবচ। টানা বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে আনাজচাষ। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ভাঙন শুরু হয়েছে ফরাক্কার হোসেনপুরে। নির্মলচরও জলভাসি।

Advertisement

ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পুজোর মুখে বৃষ্টি এই প্রথম নয়। তবে সেই এক অসুরকে সামলাতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয়। এ বার তো তিনটে অসুর। পুজোর বাজার নিয়ে তাঁরা মোটেই উচ্ছ্বসিত নন।

চাষিরা জানাচ্ছেন, পাট নিয়ে যা হল তাতে লাভ তো দূরের কথা, আসল খরচটুকু উঠবে কিনা সন্দেহ। শেষ আশা ছিল আনাজ। টানা বৃষ্টিতে সেই আনাজও ক্ষতির মুখে। পুজোর বাজার ধরতে প্রতি বছরই আগাম ফুলকপি চাষ করেন হরিহরপাড়া ব্লকের দস্তুরপাড়া, শ্রীহরিপুর, রমনা-সহ অন্য গ্রামের চাষিরা। এ বছর কপি চাষ মাটি করে দিয়েছে বৃষ্টি। ক্ষতির মুখে পালংশাক, মুলো, লালশাক-সহ অন্য আনাজও। শ্রীহরিপুরের নৃপেন মণ্ডল বলছেন, ‘‘শেষ ভরসা ছিল আনাজ। তা-ও শেষ হয়ে গেল। কী ভাবে পুজোর বাজার হবে, জানি না।’’

বিডিও অফিস কিংবা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে থিকথিক করছে ভিড়। কেউ এসেছেন জমির রেকর্ড খুঁজতে। কারও দরকার জমির দলিল। এনআরসি-আতঙ্কের কারণে জেলার বহু লোকের পুজো মাথায় উঠেছে। তাঁদের কথায়, ‘‘আগে দেশে থাকার ব্যবস্থা করি। তার পরে তো পুজোর বাজার!’’

কান্দির ব্যবসায়ী প্রশান্ত দাস বলছেন, “পুজোর আগেই গয়নার দোকান খুলেছি। ভেবেছিলাম, পুজোর সময় বেচাকেনা হবে। কিন্তু বৃষ্টিতে সব মাটি করে দিল।” একই ভাবে প্রতিমা শিল্পীরাও সঙ্কটে পড়েছেন। মাটির কাজ শেষ। কিন্তু প্রতিমা না শুকোলে রং হবে কী করে? শুক্রবার বেলডাঙার বাজার বন্ধ থাকে। কিন্তু সামনেই দুর্গাপুজো বলে শুক্রবার রাত পর্যন্ত বহু দোকান খোলা ছিল। কিন্তু কেনাবেচা একেবারেই হয়নি।

সুতির ব্যবসায়ী আমজাদ আলি বলছেন, ‘‘পাঁচ দিন থেকে বৃষ্টির কারণে বেচাকেনা একেবারে বন্ধ। এ বছর বৃষ্টির জন্য আয় তো দূরে থাক, মহাজনকে কী করে টাকা দেব সেই চিন্তায় রাতে ঘুম হচ্ছে না।’’ বহরমপুরের এক বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের মালিক জয়চাঁদ বাগরেচা বলছেন, ‘‘গত রবিবার পর্যন্ত কেনাবেচা হলেও বৃষ্টি শুরু হতেই কেনাবেচা নেই বললেই চলে।’’ আর এক বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের মালিক রঞ্জিতকুমার পালের গলায় স্পষ্ট হতাশা, ‘‘বৃষ্টিই সব শেষ করে দিল। এ দিকে মহাজন টাকা চাইছে। গত বারের অর্ধেক ভিড়ও এ বার নেই। এক দিকে এনআরসি নিয়ে মানুষ চিন্তায় আছে, অন্যদিকে বৃষ্টি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন