Durga Puja 2020

এ বছরের পুজো প্রবাসেই

‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ সুবিধা থাকলেও করোনা সংক্রমণের ভয়ে বেঙ্গালুরুতেই রয়ে গিয়েছেন  সুষমা পোদ্দার। ফোনে তিনি বলেন, “ভেবেছিলাম পুজোর সময় সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গেল।

Advertisement

বিদ্যুৎ মৈত্র 

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ০১:৩৭
Share:

প্রতীকী চিত্র।

চেনা ঘর, উঠোনের ছায়া, পাড়ার বন্ধু— এ বার সুদূরই থেকে যাচ্ছে ওঁদের কাছে। ট্রেন-বাস-উড়ান কার্যত হারিয়ে যাওয়ায় কর্মসূত্রে প্রবাসে থাকা চাকুরিজীবী কিংবা বেশ কিছু পড়ুয়ার এ বার পুজোয় আর দেশের বাড়ি ফেরা হচ্ছে না। লকডাউন উঠে গেলেও ট্রেন এখনও সহজপ্রাপ্য নয়। তার টিকিট জোগাড় করতে গিয়ে ভোপালে কর্মরত সত্যজিৎ সাহাকে শুনতে হয়েছে, ‘‘৩০ নভেম্বরের আগে কোনও টিকিট পাবেন না, কারণ ট্রেন নেই।’’ মধ্যবিত্তের সহজলভ্য পরিবহণ ট্রেন উধাও হয়ে য়াওয়ায় টাকা জমিয়ে যাঁরা উড়ানের টিকিটের খোঁজে গিয়েছিলেন, তাঁদের হাত পুড়েছে। বাস প্রায় উধাও গাড়ি ভাড়া করে গ্রামে ফেরার সাধ্য নেই অধিকাংশের। ফলে পুজোয় এ বার প্রবাসেই। কান্দির সুপ্রিয় সামন্ত চাকরি সূত্রে রয়েছেন মহারাষ্ট্রে। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেন প্রায় নেই। অনেক চেষ্টা করেও টিকিট জোগাড় করতে পারিনি। যা আয় করি উড়ানে যাওয়া বিলাসিতা। আর গাড়ি ভাড়া করে যাব এমন ভাবতেও পারি না। তাই এ বার আর হল না।’’ তামিলনাড়ুতে কর্মরত বেলডাঙা এলাকার সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা, ‘‘কোনওক্রমে বিমানে না হয় কলকাতা গেলাম। তার পর? বাসে উঠে গ্রামে ফেরা মানে তো বৃদ্ধ বাপ-মায়ের জন্য করোনা ভাইরাস বয়ে নিয়ে যাওয়া। আর গাড়ি ভাড়া করে তিন দিনের জন্য যাওয়ার কথা ভাবতে পারছি না।’’

Advertisement

অগত্যা দূর থেকেই ঢাকের বাদ্যি শুনে পুজো কাটানোর কথা ভাবছেন ওঁরা। শুধু ভিন রাজ্যের বাসিন্দা নন, কাজের সূত্রে কলকাতায় বা অন্য জেলায় থাকা এবং পুজোর সময় লম্বা ছুটি নিয়ে ঘরে ফেরা মানুষজনেরও এ বার দেশের বাড়ি সুদূরই হয়ে থাকছে। তাঁদেরই এক জন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মথুরাপুরে কর্মরত সত্যেন সামন্ত। তিনি বলেন, ‘‘ছুটি তো পাব দিন চারেকের। কিন্তু যেতে যা হ্যাপা এবং খরচ, তাতে সামাল দিতে পারব না। তা ছাড়া গেলে ফের যদি করোনা হয়, ফিরলে চাকরি থাকবে না!’’

লকডাউনের আগে বহরমপুর-শিয়ালদা শাখায় আপ ডাউন মিলিয়ে ১৮জোড়া ট্রেন চলাচল করত। তার মধ্যে এক্সপ্রেস ট্রেন ছিল তিনটি। সেই ট্রেন কবে চলবে তা কেউ জানেন না। বহরমপুর চুঁয়াপুরের বাসিন্দা সত্যজিত মণ্ডল ১৭ বছর কলকাতায় এক বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করলেও পুজোর সময় বাড়ি ফিরতেন নিয়ম করে। ফোনে সত্যজিত বলেন, “ছোট বাচ্চা নিয়ে ভিড় বাসে জেলায় ফেরা এই অতিমারিকালে ভাবতেও পারি না। তাছাড়া পাঁচ-ছয় হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া করে যে বাড়ি যাব সে সামর্থ্যও নেই।” ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ সুবিধা থাকলেও করোনা সংক্রমণের ভয়ে বেঙ্গালুরুতেই রয়ে গিয়েছেন সুষমা পোদ্দার। ফোনে তিনি বলেন, “ভেবেছিলাম পুজোর সময় সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গেল। কলকাতা থেকে ট্রেন চলাচল থাকলে তবু আসন সংরক্ষণ করে যাওয়া যেত।”

Advertisement

ফি বছর উচ্চশিক্ষার জন্য ভিন রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান জেলার অনেক ছেলে-মেয়ে। উত্তরপ্রদেশের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন সঞ্জয় কুন্ডু। তিনি ফোনে বললেন, “বারেবারে যাতায়াত খরচ সাপেক্ষ। ট্রেন চললে পুজোতে বাড়ি ফিরতাম। তা আর হলো না।” স্থানীয় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সেখানেই একটি ঘরভাড়া করে আছেন সঞ্জয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন