দুগ্গার রসুই ঘরে কেয়া, জাহানারাও

পুজোর শুরু ১৯৯২-এ। শুরুটা অবশ্য করেছিলেন পুরুষরাই। নানা কারণে ২০০২ সালে বন্ধ হতে বসেছিল সেই পুজো। কিন্তু তা হতে দেননি পাড়ার মহিলা আল্পনা সাহা, জাহানারা বেগম, নমিতা ভট্টাচার্য, ইদি বেগম, জোৎস্না বেগমরা।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

এখন নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই ইদি বেগমের। আর ক’টা দিন বাকি। পুজো কমিটির সম্পাদক নমিতা ভট্টাচার্যের সঙ্গে চাঁদা তোলার পুরো ভার তাঁর। জাহানারা বেগমের দায়িত্ব আবার অন্য। পুজো সামলানোর দায়িত্ব আবার তাঁর কাঁধে। অন্যান্য বারের মতো এ বারও পুজোর সভাপতি আল্পনা সাহার সঙ্গে পুজোর ফল কাটার ভার তাঁর।

Advertisement

এ পুজোয় সবার দায়িত্বই ভাগ করা রয়েছে। যেমন, কেয়া জানার সঙ্গে ভোগ বিতরণ করেন জ্যোৎস্না বেগম। মুর্শিদাবাদ (লালবাগ)- এর ‘সাহানগর উমরাহগঞ্জ মহিলা দুর্গোৎসব সমিতি’র এই প্রথা দীর্ঘ দিনের। হিন্দু এবং মুসলিম মহিলারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুজো করেন। এ বছর তাঁদের পুজো ১৫ বছরে পড়ল।

পুজোর শুরু ১৯৯২-এ। শুরুটা অবশ্য করেছিলেন পুরুষরাই। নানা কারণে ২০০২ সালে বন্ধ হতে বসেছিল সেই পুজো। কিন্তু তা হতে দেননি পাড়ার মহিলা আল্পনা সাহা, জাহানারা বেগম, নমিতা ভট্টাচার্য, ইদি বেগম, জোৎস্না বেগমরা।

Advertisement

লালবাগ শহরের সাহানগর ঘাট রোডের উপর তিন শতক জমির উপর ‘সাহানগর উমরাহগঞ্জ মহিলা দুর্গোৎসব সমিতি’র পুজোর মণ্ডপ তৈরি হয়। জাহানারা বেগম সেই পুজোয় কেবল যোগই দেন না, পুজোর বেদির ওই জমিটুকুর মালিকও ছিলেন তাঁর শ্বশুর, প্রয়াত কাসেম আলি। পরে পুজো কমিটিকে সে জমি দান করা হয়।

জাহানারা বলেন, ‘‘জানেন, শ্বশুরবাড়ির উঠোনেই সেই প্রাচীন কাল থেকে ইমামবাড়ার পাশেই রয়েছে শিব মন্দির। সেই মন্দিরে আছে কষ্টিপাথরের জোড়া শিবমূর্তি। শিবরাত্রিতে সেখানে পুজো হয়। ফলে পাড়ার দুর্গাপুজোয় আমাদের সামিল হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।’’

এমনকী, যে বছর পুজো ও রোজা একই সময়ে পড়ে, তখন রোজা রেখেই জ্যোৎস্না বেগমদের পুজো মণ্ডপে বসে প্রসাদের ফল কাটার পর হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ছুটতে হয় ইফতারির ফল কাটতে। এটাই এই পুজোর দস্তুর। আবার উল্টোটাও রয়েছে। ইদে সামিল হন নমিতা, কেয়ারাও। আয়োজনে কোনও ভেদাভেদ রাখেন না এখানকার বাসিন্দারা।

প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে নমিতা ভট্টাচার্যের সঙ্গে জ্যোৎস্না বেগম ওই পুজো কমিটির সদস্যদের বাড়ি গিয়ে মাসিক ধার্য চাঁদা সংগ্রহ করেন। ইদি বেগম বলেন, ‘‘লালবাগে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ ইদ ও পুজোর আনন্দে মাতেন, ফের তাঁরাই সম্মিলিত ভাবে মহরম মাসের প্রথম ১০ দিন মাতমে শোকপালন করেন। সেই মাতমে যোগ দেন প্রতিবেশী দুই সম্প্রদায়ের যুবকরাই।’’

নবমীর দুপুরে কোনও বাড়িতেই হাঁড়ি চড়ে না। নমিতা বলেন, ‘‘নবমীতে পাড়ার সবাই মণ্ডপে পাত পেড়ে এক সঙ্গে খাই। সে দিন গোটা পাড়াটাই যেন একটি পরিবার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন