কাঁটাতার ঘেঁষা আহ্লাদ

তেহট্টের বেতাই ভাটুপাড়া গ্রাম লাগোয়া সীমান্তের ১২৫ ও ১২৬ নম্বর পিলারের মাঝে কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে অন্য বছরের মতো এ বারেও হচ্ছে পুজো। গ্রামের মানুষের সঙ্গে যে পুজোয় আনন্দে মাতেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী জওয়ানেরাও। 

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

তেহট্ট শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৫৭
Share:

নিজস্ব চিত্র

মণ্ডপ থেকে কাঁটাতারের বেড়ার দূরত্ব মাত্র পনেরো ফুট।

Advertisement

তেহট্টের বেতাই ভাটুপাড়া গ্রাম লাগোয়া সীমান্তের ১২৫ ও ১২৬ নম্বর পিলারের মাঝে কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে অন্য বছরের মতো এ বারেও হচ্ছে পুজো। গ্রামের মানুষের সঙ্গে যে পুজোয় আনন্দে মাতেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী জওয়ানেরাও।

আশি বছরের নিরঞ্জন বিশ্বাসের কথায়, “বাংলা ১২৭৪ সাল থেকে এই গাঁয়ে পুজো হয়ে আসছে। তখনও দেশ অবিভক্ত। পরে পুজোর মন্দির অক্ষত রেখেই কাঁটাতারের বেড়া দেয় সরকার।’’ তিনি জানান, দেশভাগের আগে তৎকালীন মেহেরপুরে সুভাষ বসু নামে এক জমিদার ছিলেন। তিনিই এক সময়ে এই মন্দির তৈরি করে পুজো শুরু করেন। আর এক বাসিন্দা মদন ঘোষও বলেন, “সেই সময়কার জমিদারদের মধ্যে সুভাষ বসুর এলাকাতেই ছিল এই গ্রাম।’’

Advertisement

সেই সময়ে শুধু মেহেরপুরের জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। অন্য সব গ্রামের মানুষ প্রায় তিন মাইল পথ পায়ে হেঁটে জমিদারবাড়ির পুজো দেখতে যেতেন। এলাকায় ঘন জঙ্গল থাকায় সকালে বেরিয়ে বিকেলেই গাঁয়ে ফিরতে হত। ‘‘মানুষের কষ্টের কথা ভেবে জমিদারবাবু এই ভাটুপাড়া গ্রামেই পুজো শুরু করেন’’— জানান মদন ঘোষ।

প্রবীণ দেবেন দাসের কথায়, “আমার বাবা, প্রয়াত পাঁচকড়ি দাস এক সময়ে জমিদার সুভাষ বসুর গোমস্তা ছিলেন। এই পুজো সম্পর্কে বাবার কাছে অনেক গল্প শুনেছি। তখন পুজো শুরু হয়েছিল বেশ ধুমধাম করে। কিন্তু দেশভাগের আগে আমাদের ভাটুপাড়া গ্রামের প্রায় সকলেই ভীষণ আর্থিক কষ্টে দিন কাটাতেন। এ গাঁয়ে হিন্দুরা থাকলেও আশপাশে মোবারকপুর, লালবাজার, ইলশেমারি-সহ কয়েকটি গ্রামে মুসলিমদের বেশ ছিল। কয়েক বার এমনও ঘটেছে যে, অর্থাভাবে পুজো হচ্ছে না জেনে মুসলিমেরাই চাঁদা দিয়ে পুজো করতে সাহায্য করেছেন।’’

দেশভাগের পরে নিরাপত্তার কারণে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হলেও গ্রামে পুজো বন্ধ হয়নি। বর্তমানে এই পুজো ভাটুপাড়া আদি বারোয়ারি পুজো নামে পরিচিত। এখন অবশ্য গ্রামে আরও দুটো পুজো হয়। এই পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “এই পুজো গ্রামের সবচেয়ে পুরনো পুজো বলে এলাকার সকলে এক বার হলেও মণ্ডপে আসেন। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরাও পুজোয় আনন্দ করেন। অঞ্জলি দেওয়া থেকে শুরু করে প্রসাদ বিতরণ, সবেতেই জওয়ানেরা য়োগ দেন। সীমান্ত সড়কেই চলে নাচগান।

পুজোমণ্ডপের পাশে কর্তব্যরত বিএসএফ-এর ৮৪ নং ব্যাটালিয়নের জওয়ানেরা জানান, বাঙালিরা তো বটেই, এই পুজোর সৌজন্যে আনন্দে মাতেন অবাঙালি জওয়ানেরাও। সকলের খুশিতেই খুশিয়াল হয়ে ওঠে সীমান্তের গাঁ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন