আশ্রমের ঘেরাটোপে পুজোর রোশনাই ফিকে

অজয়ের কথায়, “রানাঘাটে থাকতাম আমরা। বাবা রামবীর কাশ্যপ জিনিসপত্র ফেরি করতেন। খুব ভাল ছিল সেই সব দিনগুলি। কিন্তু বাবা-মায়ের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হল।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩৬
Share:

জৌলুসহীন। নিজস্ব চিত্র

তিন বছর আগে বাবা-মা-ভাইয়ের সঙ্গে হইহই করে পুজোর জামাকাপড় কিনতে গিয়েছিল রানাঘাটের অজয় কাশ্যপ। কিন্তু এখন জীবন আমূল বদলে গিয়েছে তার। নতুন পোশাক এখন আর হয় না করিমপুর পাট্টাবুকা অনাথ আশ্রমের আবাসিক বছর তেরোর অজয় আর তার ছোট ভাই বিজয়ের। ওই আশ্রমে মোট একত্রিশ জন আবাসিক। তাদের বয়স চার থেকে পনেরোর মধ্যে।

Advertisement

অজয়ের কথায়, “রানাঘাটে থাকতাম আমরা। বাবা রামবীর কাশ্যপ জিনিসপত্র ফেরি করতেন। খুব ভাল ছিল সেই সব দিনগুলি। কিন্তু বাবা-মায়ের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু হল। মা আমাদের ছেড়ে কোথায় যেন চলে গিয়েছেন। বাবা আমাদের দুই ভাইকে এই আশ্রমে রেখে গেলেন। মাঝে-মাঝে দেখা করতে আসেন। এখন আর পুজোয় কোনও আনন্দ নেই।”

এই আশ্রমেই থাকে শান্তিপুর নতুন হাটের সংগ্রাম মণ্ডল। বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে সংগ্রামের দাদা ও পিসি তাকে এখানে পাঠিয়ে দেয়। বছর চোদ্দোর সংগ্রাম বলে, “তিন দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দাদা তাঁতের কাজ করে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর মামা আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আমাকে দিয়ে সারা দিন কাজ করাতেন। সে সব জেনে দাদা ও পিসি আমাকে এখানে রেখেছে। দাদা দেখা করতে আসে।” সংগ্রামের কথায়, ‘‘প্রথমে খুব মন খারাপ করত। এখন অনেকটা সয়ে গিয়েছে। গত পুজোয় আশ্রমের সকলকে নতুন জামা দেওয়া হয়েছিল। গাড়ি করে ঠাকুর দেখাতেও নিয়ে গিয়েছিল। এ বারও নিয়ে যাবে বলেছে।’’ গত বছরেও বাবা-মা-দিদির সঙ্গে পুজো দেখেছে বছর পনেরোর অঞ্জন সোম। কিন্তু এ বছর সে আশ্রমের চার দেওয়ালে প্রিয়জনদের থেকে দূরে। কিচ্ছু ভাল লাগছে না তার। দিন কুড়ি আগে গেদে সীমান্তে আটক হওয়া বাংলাদেশের বরিশালের বাসিন্দা অঞ্জনের ঠিকানা এখন পাট্টাবুকা আশ্রম। পুজোর সব রোশনাই তার চোখে এখন ফিকে। অঞ্জন বলে, “উত্তর ২৪ পরগনায় দাদার কাছে বেড়াতে এসে গেদে সীমান্তে গিয়েছিলাম। পাসপোর্ট সঙ্গে না-থাকায় নিরাপত্তা অফিসারেরা আমাকে ধরে ফেলে। ওঁরা আমাকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।” পাট্টাবুকা শিশু আবাসের সুপারিন্টেনডেন্ট অমিত আইচ জানান, পুজোর সময় আশ্রম কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তিগত ভাবে অনেকে আবাসিকদের নতুন জামা দেন। শিশু-কিশোর আবাসিকদের পুজো মণ্ডপে ঘোরানো হয়। বিশেষ খাবার-দাবারের ব্যবস্থা হয়। চেষ্টা করা হয় যাতে বাড়ি বা পরিবারের অভাব কিছুটা হলেও মেটে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন