বিশ্বকাপ
চায়ের ভাঁড়ে সুড়ুৎ করে শেষ চুমুকটা মেরে ভদ্রলোক একটু দূরের দিকে ছুড়ে দেন ভাঁড়টা। একটু দূর....গোটা পাঁচেক আগের কোনও বিশ্বকাপ। তার পর, বিড় বিড় করেন,
—সে একখান উড়ন্ত চাকতির মতো গোল! সেই সব পায়ের কাঁপন ধরা নকশি কাঁথা সেই সব, সেই সব।
দীঘল স্ক্রিনের সামনে অজস্র কুচো মাথা। ভারী কথনে, মদ্রিচ আর পোগবার যাদু দেখানোর অপেক্ষা। কার ডিফেন্স কার গোললাইন সেভ, কত হিসেব ভেঙে দিতে পারে তার একটা আগাম খতিয়ান।
ভদ্রলোক আরও একবার অতীতাশ্রয়ী হয়ে পড়েন, পা থেকে কোমড় কথা বলত ওঁদের, শূন্য তাই গোল করার ক্ষেত্র ছিল!
সে কথা কারও কানে যায়, কারও অধরাই থাকে। শুধু পিছনের দিকে হাঁটতে থাকেন তিনি।
হবু ফলাফল, মৃদু তর্ক, খেলার ফাঁকে খাওয়ার কথা, চড়া সুরে ধরা বাজি, নাহ, কানে যায় না কিছুই।
অতীত আর সাম্প্রতিকের সেই লড়াইয়ে কে জেতে আর হেরেই বা যায় কে, ঠাওর হয় না। শুধু পুরনো যাদু, আর হালের শক্তির একটা ঠোকাঠুকি লেগেই থাকে। এ বারও কি তার ব্যতিক্রম হবে?
ভদ্রলোক বলেন,
—নাহ, সে সুযোগ কই। এখন খেলার মাঠে লড়াই যেন যুদ্ধের মতো। সেখানে খেলার চেয়ে সময় নষ্টের খেলাই যেন বেশি। তা হলে কি সেই নেইমারকে টেনে আনলেন
—নাম করি কি করে, তবে পুরনো মাঠে দেখেছি, শরীর ঘেঁষা খেলায় ধাক্কাধাক্কির বহর। প্রতিপক্ষ পড়ে গেলে বিরুদ্ধ হাতই তুলে নিত তাকে। এখন সেই হাতও আর নেই।
সে সময়ে তো ভগবানের হাতও ছিল!
তা ছিল, তবে সে পা ছিল ঈশ্বরিক।
সেই হারানো হাত আর পায়ের ফেলে আসা অতীতে ডুব দিতে গিয়ে কখনও হিস্পানি গান কখনও বা সাম্বার অতি-আদি নাচের কথা মনে পড়ে যায় তাঁর।
রবিবাসরীয় রাতে সেই গান নাচেরই স্বপ্নেই সাম্প্রতিক খুঁজছেন তিনি।