ক্লাসের পড়ায় মন বসবে কী করে, গরমে যে হাসফাঁস দশা খুদে পড়ুয়াদের। বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে বটে স্কুলে। কিন্তু বিল মেটাবে কে? তাই ঝামেলা এড়াতে ক্লাসঘরে পাখাই লাগানো হয়নি।
সর্বশিক্ষা মিশনের সৌজন্যে প্রাথমিক স্কুলগুলোতে এখন পৌঁছে গিয়েছে বিদ্যুৎও। পড়ুয়াদের মাথার উপরে পাখার ব্যবস্থাও করেছে অধিকাংশ স্কুল। কিন্তু তীব্র দাবদাহে সে পাখা ঘুরবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ।
পাখা রয়েছে, তবে ঘুরবে না কেন? স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বলেছেন, ‘‘পাখা ঘুরবে কী করে? বিদ্যুৎ সংযোগ এলেও, বিলের টাকার কোনও সংস্থান যে হয়নি।’’
নদিয়া জেলায় ২৯২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সব ক’টি স্কুলেই বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। নাকাশিপাড়ার কাঁচকুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর বর্মন বলেন, “বিদ্যুৎ বিলের টাকা সরকার দিচ্ছে না। ফলে ক্লাস ঘরে পাখার ব্যবস্থা করা যায়নি।” পলাশিপাড়ার অভয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলাম জানান, তাঁদের স্কুলে ২০টি পাখা রয়েছে। জলের পাম্পও চলে। মাসে কমবেশি ১০০০ টাকা বিল হয়। তাঁদেরই বিলের ব্যবস্থা করতে হয়।
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘অন্য খাত থেকে বিদ্যুৎ বিলের টাকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।’’
আরও পড়ুন: পথের ধারে বন্ধ দোকান
ফরাক্কার মুস্কিনগরে এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তো বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসে চিঠি লিখে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন এক সপ্তাহ আগে। তাঁর স্কুলে ৪০০ ছাত্র-ছাত্রী। ২০টি পাখা চলে। সর্বশিক্ষা থেকে হাজার চল্লিশ টাকা পেয়ে দু’টি পাম্প বসানো হয়েছে।
সুতি-২ ব্লকের একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তৃণমূল নেতা ওবাইদুর রহমান। তিনি জানান, এত দিন ‘ম্যানেজ’ করে বিল মেটানো হচ্ছিল। তিনি বলেন, “গরম সহ্য করতে পারি না বলে ২০১২ সালে নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ নিই। বিলও মেটাচ্ছিলাম নিজের পকেট থেকে। পরে স্কুলে পুলিশ পিকেট বসে। তাদের বিলও মেটাতে হয়েছে আমাকে। গরমে কত বিল হবে বুঝতে পারছি না। ফলে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছি।” তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি শুভজিৎ সিংহ বলেন, “আমরা শিক্ষকদের আপাতত রক্ষণাবেক্ষণ খাতের টাকা থেকে বিল মেটাতে বলেছি। সেই খাতের বরাদ্দ ৫০ থেকে বাড়িয়ে মাসে ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছি।’’