অহরহ ভাঙনে ত্রস্ত শিমুলডাঙা

ভাঙনের গ্রাসে আক্রান্ত দেবালয়। মন্দির থেকে কয়েক হাত দূরে চলে এসেছে ভাগীরথী। আশঙ্কার মধ্যেই দুর্গাপুজো সেরেছেন বেলডাঙার শিমুলডাঙার মানুষ। আবার একই আশঙ্কার মধ্যেই চলছে কালীপুজো ও দীপাবলীর আয়োজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৮
Share:

জল যত নামছে ততই ধসছে নদীর পাড়। —নিজস্ব চিত্র

ভাঙনের গ্রাসে আক্রান্ত দেবালয়। মন্দির থেকে কয়েক হাত দূরে চলে এসেছে ভাগীরথী। আশঙ্কার মধ্যেই দুর্গাপুজো সেরেছেন বেলডাঙার শিমুলডাঙার মানুষ। আবার একই আশঙ্কার মধ্যেই চলছে কালীপুজো ও দীপাবলীর আয়োজন।

Advertisement

গ্রামবাসীদের কথায়, ‘‘আমরা মায়ের সন্তান। এক দেবী পুজিত হলেন। অপর মা আসছেন। জগৎ হাসছে। আমরা কাঁদছি। আমাদের উপর মা সদয় হচ্ছেন না কেন?’’ গত দিন পনেরো ধরে দিনরাত এক করে ভাগীরথীর পাড় ভাঙছে। শিমুলডাঙার বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙেছে। আসন্ন ভাঙনের আশঙ্কায় অনেকেই বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছেন। পাছে, ঘুমন্ত অবস্থাতেই নদী হানা দেয়!

গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই দিন মজুরি করে দিন গুজরান করেন। গত এক বছরে গ্রামের প্রায় ৪০টি পরিবার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বাসা বেঁধেছেন। শিমুলডাঙার পূর্বপাড়ার যে মন্দিরে তিন দশক আগে দুর্গাপুজো হত, তা এখন নদী-গর্ভে। পরে নদী তীর থেকে অনেক দূরে নতুন মন্দির গড়া হয়। কিন্তু সেই মন্দিরও ভাঙনের কবলে। মন্দিরে ফাটল ধরেছে। মন্দির লাগোয়া মাঠে ফি বৎসর পুজোর পর ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত। সেই মাঠও ভাঙনের কবলে। তাই খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। পুজো কর্তাদের অন্যতম গ্রামের দেবেন মণ্ডল ও প্রেমচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘আকাশের মুখ ভার ছিল। সঙ্গে গ্রামেরও। কারও পুজো নিয়ে আগ্রহ নেই। কেউ পুজোর কেনাকাটা করেননি। তাই কেউ চাঁদাও দিচ্ছিলেন না। আমরা কয়েকজন টাকা দিয়ে পুজো করেছি।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘মা নিজের দশ হাতে ভাঙন রুখতে পারছেন না।’’

Advertisement

শিমুলডাঙার বরিষ্ট নাগরিক অনাদিভূষণ মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী শেফালি মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতিদিনই একটু একটু করে নদী বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। আগে যেখানে গোয়ালবাড়ি, মূল ফটক ছিল তা জলের তলায়।’’ শেফালিদেবী বলেন, ‘‘আমার শ্বশুরদের পাঁচ শরিকের বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। আমাদের বাড়িও যে কোনও দিন নদী গ্রাস করবে। এই ভাবে যত দিন বাঁচা যায়।’’

গ্রামের ভানুপতি মণ্ডল, পাশোরা মণ্ডল, রাখালচন্দ্র মণ্ডল, বামাচরণ মণ্ডল, ভক্তিভূষন মণ্ডল, ইবন মণ্ডল, মানিক মণ্ডল, ইন্দ্রজিৎ মণ্ডলদের বাড়ি গঙ্গার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত। শিমুলডাঙার মিনতি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার ছেলে ও মেয়ে স্কুলে পরে। তাদের অঙ্গে এ বার নতুন জামা ওঠেনি। গ্রামে পুজো তো বন্ধ হতে বসেছিল।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের প্রেমচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ভাঙন চলছে। শিমুলডাঙায় পুজো বন্ধের মুখে পরেছিল। এখনও ভাঙন কমবেশি হচ্ছে।’’ বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কংগ্রেসের ইন্দ্রনীল প্রামাণিক বলেন, ‘‘ওই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই দিনমজুর। তার উপর ভাঙনের গ্রাসে তাঁরা আতঙ্কিত। তার মধ্যে পুজো চালানো খুব কঠিন। দুর্গা হল এবার কালীপুজো কী ভাবে হয়, সেটাই ভাবছি।’’ বেলডাঙা-২ ব্লকের বিডিও দিলীপ বাগদি বলেন, ‘‘গত বছর ওই গ্রামে ভাঙন আটকাতে মাটি বোঝাই প্লাস্টিক বস্তা ফেলা হয়েছিল। তাতে কিছুটা কাজও হয়েছিল। এ বছর আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। সেচ দফতরকে বিষয়টি অবগত করেছি। খুব দ্রুত নদীর পাড় বাঁধানোর কাজ শুরু হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement