নদিয়া কার, প্রমাণ বন্‌ধে

দুই তরফেই দেখিয়ে দেওয়া ও পাল্টা দেখে নেওয়ার তোড়জোড়! ইসলামপুরের ঘটনার প্রতিবাদে আগামী বুধবার ১২ ঘণ্টার বাংলা বন‌্ধ ডেকেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখে ওই দিনই নদিয়ায় কার শক্তি বেশি তা মেপে নিতে চাইছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস। 

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩৩
Share:

দুই তরফেই দেখিয়ে দেওয়া ও পাল্টা দেখে নেওয়ার তোড়জোড়! ইসলামপুরের ঘটনার প্রতিবাদে আগামী বুধবার ১২ ঘণ্টার বাংলা বন‌্ধ ডেকেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখে ওই দিনই নদিয়ায় কার শক্তি বেশি তা মেপে নিতে চাইছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস।

Advertisement

যুযুধান দুই পক্ষের ক্ষমতা প্রমাণ ও সম্মান রক্ষার লড়াই হতে চলেছে সে দিন তা বলছে রাজনৈতিক মহলই। বন্‌ধ সফল করতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি আর তা ব্যর্থ করতে তাল ঠুকছে তৃণমূল। গোটা রাজ্যে এটাই ঘটবে হয়তো বুধবার কিন্তু নদিয়ার তার গুরুত্ব একটু আলাদা। কারণ, রাজ্যের যে ক’টি অঞ্চলে পঞ্চায়েত ভোটের পর বিজেপি নিজেদের অনেকটা জমি পেয়েছে এবং শাসক দলের অস্বস্তির কারণ হয়েছে তার অন্যতম হল নদিয়া। রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, নদিয়া যে ক্রমশ তাদের আরও বেশি কুক্ষিগত হচ্ছে তা বন্‌ধ সফল করে প্রমাণের দায় থাকবে নদিয়া বিজেপি-র। অন্য দিকে, একটু ব্যাকফুটে থাকা তৃণমূল নিজেদের প্রভাব পুনরুদ্ধারের মরিয়া চেষ্টা চালাবে।

এক বার তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের জয়ী হওয়া ছাড়া নদিয়া জেলায় বিজেপির তেমন সাফল্য ছিল না। ব্যতিক্রম বলতে ধুবুলিয়ার তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানে তারা দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু এ বার পঞ্চায়েত ভোটে পরিস্থিতি অনেকটা উল্টে গেল। সিপিএম ও কংগ্রেসকে অনেকটাই পিছনে ফেলে বিজেপি নিজেকে একটা শক্তিশালী দল হিসাবে তুলে ধরতে পেরেছে এবং রীতিমত চাপে ফেলে দিয়েছে শাসকদলকে। শুধু তাই নয়, বাগবেড়িয়া-সহ একাধিক পঞ্চায়েতে পাল্টা মার দিতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে।

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটের পর নদিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলাদা করে জরুরি বৈঠক করতে হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। এই পরিস্থিতিতে উজ্জীবিত বিজেপির কর্মীরা। সামনে লোকসভা ভোট। তার আগে ইসলামপুরে দুই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাকে সামনে রেখে আরও এক বার সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে জেলা নেতারা বলছেন, “ভোট তো মানুষ গোপনে ঘেরা জায়গায় দেন। কেউ জানতে পারে না। এ বার আমরা সেই মানুষগুলিকে প্রকাশ্য রাস্তায় নামিয়ে আনব। ক্ষমতা থাকলে তৃণমূল আটকে দেখাক।” স্কুল, কলেজ, দোকান, বাজার তো বটেই বন্‌ধে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বাস, ট্রেনচলাচল বন্ধ করে দিয়ে গোটা জেলাকে স্তব্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিজেপি। সেই মতো কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরের নেতারা দফায় দফায় বৈঠকও শুরু করেছেন।

লড়াইয়ের এই চাপ অনুভব করছে তৃণমূল নেতৃত্বও। বন্‌ধ ব্যর্থ করতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবে তাঁরাও। তারা জানে, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি যদি এক বার নদিয়ায় বন্‌ধ কিছুটা হলেও সফল করে দিতে পারে তা হলে দু’দিক থেকে তাদের ক্ষতি। প্রথমত, বিজেপির কর্মীরা আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠবেন। তাঁদের মনবল বাড়বে, তৃণমূল কর্মীরা আরও গুটিয়ে যাবেন। দ্বিতীয়ত, সর্বত্র বার্তা যাবে, নদিয়ার অন্যতকম শক্তি হয়ে উঠেছে বিজেপি। কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্ব একে আরও বাড়ানোর জন্য ঝুঁকবে। সাধারণ মানুষের উপরও এর প্রভাব পড়বে। তাঁরাও অনেকে বিশ্বাস করতে থাকবেন, বিজেপি লোকসভা ভোটে জেলায় সত্যিই ভাল ফল করতে চলেছে। যার প্রভাব পড়তে পারে ভোট বাক্সে। তাই এই বন্‌ধে আর কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না তৃণমূল। প্রস্তুত করছেন কর্মীদের। জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে, এই বন্‌ধ কোনও ভাবেই সফল হতে দেওয়া যাবে না। এই বার্তাটাই আমাদের কাছে যথেষ্ট। আমরা জানি কী ভাবে বন্‌ধ ব্যর্থ করতে হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন