‘লু’-এর ধাক্কায় ভিড় হাসপাতালে

কারও বোশেখ মাস, কারও বা ঘোর সর্বনাশ! সরকারি হাসপাতালের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘পৌষ মাসে আমাদের শ্বাস নেওয়ার সময় থাকে না। তুলনায় গ্রীষ্ম অনেক স্বস্তিদায়ক। আমাদের বৈশাখ মাসই ভাল!’’ ভরা গ্রীষ্মের হাঁসফাঁস অবস্থাটুকু ছাড় দিলে সরকারি হাসাপাতালগুলির অতীত অভিজ্ঞতা এমনই। এ বার সেই চেনা স্বস্তিটাই খুইয়ে বসেছে কল্যাণীর জওহারলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতাল।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০১:৪২
Share:

কারও বোশেখ মাস, কারও বা ঘোর সর্বনাশ!

Advertisement

সরকারি হাসপাতালের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘পৌষ মাসে আমাদের শ্বাস নেওয়ার সময় থাকে না। তুলনায় গ্রীষ্ম অনেক স্বস্তিদায়ক। আমাদের বৈশাখ মাসই ভাল!’’ ভরা গ্রীষ্মের হাঁসফাঁস অবস্থাটুকু ছাড় দিলে সরকারি হাসাপাতালগুলির অতীত অভিজ্ঞতা এমনই। এ বার সেই চেনা স্বস্তিটাই খুইয়ে বসেছে কল্যাণীর জওহারলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতাল। কেন? চিকিৎসকদের সংক্ষিপ্ত উত্তর: গরম।

জেলা সদরের হাসপাতালগুলির পরিসংখ্যান বলছে, এই সময়ে ভর্তির চাপ অপেক্ষাকৃত কম থাকে। নেহাত ‘এমার্জেন্সি’ না থাকলে বড় অস্ত্রোপচারও করতে চাননা চিকিৎসকেরা। সদ্য মিটেছে ভোটপর্ব। তবে, তা-ও নির্বিঘ্নেই। অন্তত কল্যাণীর ওই হাসপাতালে, ভোট পরবর্তী হিংসায় জখম হয়ে রোগী-ভর্তির হিড়িকও তেমন নেই।

Advertisement

তবু, হাঁসফাঁস অবস্থাটা কাটছে না জেএনএম হাসপাতালের। প্রায় প্রতি দিনই গরমের পুরনো পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভর্তির হিড়ক পড়ে গিয়েছে হাসপাতালে। গড়ে ৮ জন রোগীকে ভর্তি করতে হচ্ছে। তবে, বড় কোনও রোগ বালাই নয়। ঘোর গরমে সকলকেই যেন ‘বোশেখ রোগে’ ধরেছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তেমন বড় কোনও অসুস্থতা নয়। কিন্তু গরমে কাবু হয়ে হাসপাতালে গড়ে অন্তত ২০ থেকে ২২ জন রোগী প্রতি দিন চিকিৎসা করাতে আসছেন। তাঁদের মধ্য়ে ৮ জনকে ভর্তিও করাতে হচ্ছে। ওই হাসপাতালের এর প্রবীণ চিকিৎসক বলছেন, ‘‘রোগের তো ছোট-বড় নেই। কেউ অসুস্থ হয়ে এলে, শয্যা খালি থাকলে তাঁকে ভর্তি করে চিকিৎসা তো করতেই হবে।’’

তার উপর এই ভরা গরমে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের ভাঁড়ার ক্রমেই তলানিতে। ভোটের জন্য গত কয়েক মাসে এলাকায় কোনও রক্তদান শিবিরও হয়নি। রক্ত আসবে কোথা থেকে?

হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘এই জোড়া সঙ্কটে অনেক দিন পড়তে হয়নি জেএনএম-কে। অন্য বছরগুলিতে এই সময়ে গরম পড়লেও দু’একটা কালবৈশাখী পারদ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ বার সেটাই হচ্ছে না।’’

এ সব ক্ষেত্রে অতি দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসার সঙ্গে প্রয়োজন হয়। আর তা করতে হাসপাতালে ভর্তি করাও অনেক ক্ষেত্রেই আবশ্যক হয়ে পড়ে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ‘‘অনেক সময়ে ভর্তি না করলেও হয়তো চলে। কিন্তু, বেড খালি অথচ ভর্তি করছি না শুনলে রোগীর বাড়ির লোক খেপে ওঠেন। সে আর এক ঝক্কি!’’

জেএনএম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাওয়াই— এই গরমে সুস্থ থাকতে হলে, সাধারণত দুপুরে চড়া রোদে বাড়ি বা কাজের জায়গা থেকে না বেরনোই ভাল। নিতান্তই বেরতে হলে ছাতা, জল, রোদ চশমা, তোয়ালে বা রুমাল সব সময় কাছে থাকা আবশ্যক। বেশি করে জল খেতে হবে।

তিনি জানান, শরীরের রক্তচাপ কমে যাওয়ার ঘটনাও এ সময়ে ঘটে বেশি। হিট স্ট্রোক’এর এটাই প্রাথমিক কারণ। যা একেবারে হাসপাতাল পর্যন্ত টেনে আনছে অসুস্থ মানুষকে। লু বা গরম হাওয়া লেগেও সান স্ট্রোকের সম্ভাবনা রয়েছে। তাতেও কাবু হয়ে পড়ছেন অনেকে।

মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অভীক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গরমে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে বা জ্ঞান হারিয়ে বহু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এঁদের কেউ মাঠে কাজ করেন। দুপুরের চড়া রোদে কাজ করতে গিয়েই বিপত্তি ঘটছে। ফলে, দুপুরে কোনওভাবেই দীর্ঘক্ষণ বাইরে থেকে পরিশ্রমের কাজ করা যাবে না। শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি উঠে গেলেই সমস্যা।’’

কাজের চাপে সে পরামর্শ যে সব সময়ে মানা সম্ভব হচ্ছে না বুঝতে পারছেন চিকিৎসকেরা। বৈশাখের পুরনো ‘স্বস্তি’ হারিয়ে তাই বেজায় হাসফাঁস অবস্থা জেএমএম-এর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন