মুক্তিযুদ্ধের পরে দু’দেশে ছিটকে যাওয়া দুই পরিবারকে এক করল ফেসবুক

বছর আটাত্তরের মৃত্যুঞ্জয়বাবু জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে যখন তুমুল রাজনৈতিক অস্থিরতা তখন ও দেশ থেকে হাজার-হাজার মানুষ চলে আসছিলেন এ দেশে, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। সেই সময় মামা তারিণীচরণ তাঁর স্ত্রী, পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়েকে পাঠিয়ে দেন হাঁসপুখুরিয়ায় ভাগ্নের বাড়িতে। প্রায় মাস তিনেক এখানে থাকার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তাঁরা ফের বাংলাদেশে ফিরে যান।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

তেহট্ট শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০৮:৫০
Share:

ভিডিয়ো কলিংয়ে দেখা। নিজস্ব চিত্র

হারিয়ে পাওয়া আত্মীয়তার বন্ধন, পরিজনের সংস্পর্শ। মনে পড়ে যাওয়া কত স্মৃতি। প্রায় ছেচল্লিশ বছর পর ছিঁড়ে যাওয়া সম্পর্কের সুতো জোড়া লেগেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের দৌলতে।

Advertisement

সীমান্ত পার করে দুই পরিবার প্রথম বারের জন্য দেখতে পেয়েছে দু’ তরফের কত নতুন সদস্যের মুখ, অবাক হয়েছে বদলে যাওয়া কত পুরনো মুখ দেখে। প্রবীণরা কত দিন পর কথা বলতে পেরেছেন এক সময়ের চেনা কাছের মানুষগুলির সঙ্গে। কয়েক দশকের জমা কথা যেন ফুরেতো চাইছে না তাঁদের। ফেসবুকের দৌলতে অপ্রত্যাশিত ‘ফিরে পাওয়া।’ কয়েক শো মাইলের ব্যবধান পেরিয়ে ভিডিও কলিংয়ে আপাতত একাকার ভারত ও বাংলাদেশের দুই উঠোন, একাকার তাঁদের হৃদয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময়। তখন বাংলাদেশের রাজশাহীর বাসিন্দা ছিলেন মামা তারিণীচরণ মিত্র। ভাগ্নে মৃত্যুঞ্জয় দত্ত ছিলেন ভারতে, তেহট্টের হাঁসপুখুরিয়া গ্রামে। বছর আটাত্তরের মৃত্যুঞ্জয়বাবু জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে যখন তুমুল রাজনৈতিক অস্থিরতা তখন ও দেশ থেকে হাজার-হাজার মানুষ চলে আসছিলেন এ দেশে, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। সেই সময় মামা তারিণীচরণ তাঁর স্ত্রী, পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়েকে পাঠিয়ে দেন হাঁসপুখুরিয়ায় ভাগ্নের বাড়িতে। প্রায় মাস তিনেক এখানে থাকার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তাঁরা ফের বাংলাদেশে ফিরে যান। কিছু দিন দু’তরফে চিঠিপত্রের আদান-প্রদান ছিল। কিন্তু সময়ের ঢেউয়ে সম্পর্ক ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। রয়ে যায় ক্ষীণ স্মৃতি।

Advertisement

হয়তো কেটে যাওয়া তার আর জুড়ত না, যদি না ‘ফেসবুক’ নামক মুশকিল আসানের উদয় ঘটত।

মৃত্যুঞ্জয়বাবুর ছেলে বছর পঁয়ত্রিশের মৃন্ময় দত্ত বলেন, “খুব ছোটবেলা থেকেই বাবার মুখে তাঁর মামাদের কথা শুনতাম। তাদের দেখতে খুব ইচ্ছে হত। শেষ পর্যন্ত মাস খানেক আগে ফেসবুকে তাঁদের নাম, পুরনো ঠিকানা এবং পদবী দিয়ে খোঁজা শুরু করলাম।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বেশ কয়েক জন ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ গ্রহণ করলেন। তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হল। তাঁদের ফোন নম্বর নিয়ে মামাদাদুদের নাম জানাতেই তাঁরা চিনতে পেরেছিলেন। তারিণী দাদুর নাতি-নাতনিদের খুঁজে পেলাম। ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগল।” বৃদ্ধ মৃত্যুঞ্জয়বাবুর কথায়, ‘‘জীবনের প্রায় শেষ লগ্নে এসে মামাবাড়ির সকলকে খুঁজে পেয়ে খুব ভাল লাগছে। প্রতিদিন ফোনে কথা হচ্ছে। ভিডিও কলিং-এ ওঁদের দেখতে পাচ্ছি।’’

উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের রাজশাহীর পল্লব মিত্র। ফোনে বললেন, “আমরাও ঠাকুর্দা, বাবা-র কাছে ভারতের মৃত্যুঞ্জয় জেঠুর নাম শুনেছিলাম। কিন্তু যোগাযোগ ছিল না। ফেসবুক আমাদের মিলিয়ে দিল।’’ প্রায় অর্ধশতক আগে তলিয়ে যাওয়া আত্মীয়তা ভেসে উঠল ফেসবুকে ভর করে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন