২৮ বছর পরে ফের মেলা, আবেগে ভাসল ধোড়াদহ

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর থানারপাড়ার ধোড়াদহে ফের শুরু হল প্রায় দুশো বছরের পুরনো রামনবমী মেলা। গত শনিবার ওই মেলা শুরু হয়েছে। চলবে রবিবার পর্যন্ত। মেলা প্রাঙ্গণে আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রবেশপথ। মন্দিরের এক পাশে তৈরি হয়েছে মঞ্চ। বসেছে প্রচুর দোকানপাটও। দেদার বিকোচ্ছে জিলিপি, তেলেভাজা। মেলায় হাজির কাঠের ছাঁচে তৈরি এক প্রকার মিষ্টি। যা একসময় ওই মেলায় মিলত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রা, বাউল, কবিগানের আসর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমপুর শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৪
Share:

চলছে কাঠের ছাঁচে মিষ্টি তৈরির কাজ। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর থানারপাড়ার ধোড়াদহে ফের শুরু হল প্রায় দুশো বছরের পুরনো রামনবমী মেলা। গত শনিবার ওই মেলা শুরু হয়েছে। চলবে রবিবার পর্যন্ত।

Advertisement

মেলা প্রাঙ্গণে আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রবেশপথ। মন্দিরের এক পাশে তৈরি হয়েছে মঞ্চ। বসেছে প্রচুর দোকানপাটও। দেদার বিকোচ্ছে জিলিপি, তেলেভাজা। মেলায় হাজির কাঠের ছাঁচে তৈরি এক প্রকার মিষ্টি। যা একসময় ওই মেলায় মিলত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রা, বাউল, কবিগানের আসর। মেলা কমিটির সম্পাদক অসীম চৌধুরী বলেন, ‘‘ছেলেবেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরে এই মেলায় আসতাম। তারপরে প্রায় আঠাশ বছর বন্ধ থাকার পরে ফের শুরু হয়েছে মেলা। তাই মেলাকে ঘিরে গ্রামের পুরনো ও নতুন প্রজন্ম সকলের মধ্যেই দেখা দিয়েছে ব্যাপক উন্মাদনা।’’

মেলা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আনুমানিক দু’শো বছর আগে স্থানীয় জমিদার পঞ্চানন চৌধুরী রামনবমী তিথিতে অধুনা মুর্শিদাবাদের চোয়া–গজনীপুরের জমিদার বসু সর্বাধিকারীর আমন্ত্রণ রক্ষা করতে ষোলো বেহারায় টানা পালকিতে চড়ে সস্ত্রীক যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর আগেই তাঁকে অপমান করা হয়। মাঝ পথ থেকেই গ্রামে ফিরে আসেন। পুরোহিত ডেকে এনে বিধান মেনে নিম-বেল কাঠের মূর্তি বানিয়ে রামপুজো শুরু করেন। কমিটির সভাপতি রূপচাঁদ মণ্ডল বলেন, “সেই থেকেই শুরু হয় রামনবমী মেলা।’’ ১৯৮৬ সালে মেলা চলাকালীন মেলার অদূরে খুন হন এক যুবক। তখন ওই মেলা ছিল পারিবারিক। সেই জন্য তাঁরা ভয় পেয়ে মেলা বন্ধ করে দেন। সেই থেকে বন্ধ ছিল মেলা। গত তিন চার বছর ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা পুনরায় মেলাটি চালু করার জন্য চেষ্টা চালান। শেষ পর্যন্ত এ বছর তা ফলপ্রসু হয়।

Advertisement

নতুন করে আবার মেলা শুরুর হওয়ার কথা শুনে আবেগ চেপে রাখতে পারলেন না গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ নন্দদুলাল ঘোষ। তিনি জানান, সেই সময়ে পুরনো নাট মন্দিরের পাশে উচু বাঁশের মাচার উপর প্রহরে প্রহরে নহবত বাজত। বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রাদল এসে অভিনয় করত। মেলার ন’দিনই হত কৃষ্ণনগরের পুতুল নাচ। ‘‘জাতি ধর্ম, দলমত নির্বিশেষে এই মেলা তখন হয়ে উঠত সকলের মহামিলনক্ষেত্র।”—মত তাঁর। মেলার কথা শুনেই বর্ধমানের শ্বশুরবাড়ি থেকে রাখী চক্রবর্তী, বহরমপুরের বাসিন্দা তুলতুলি বাগচি বাপের বাড়ি ধোড়াদহে এসেছেন। রাখীদেবীর কথায়, “আমি যখন ২-৩ বছরের তখন মেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই মেলা হচ্ছে শুনে বাপের বাড়ি চলে এসেছি।”

তুলতুলিদেবী বলেন, “অনেক মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে বাবামায়ের হাত ধরে এই মেলায় আসতাম। তারপর মেলা বন্ধ হয়ে গেল। বিয়ের পরে এই প্রথম মেলা শুরু হচ্ছে। তাই ক’দিন আগে থেকেই সপরিবারে চলে এসেছি।”

নতুন প্রজন্মের অমিত ভট্টাচার্য, রাজকুমার ঘোষ কিংবা রুদ্রপ্রসাদ স্যান্যালদের উৎসাহও চোখে পড়ার মতো। মেলা কমিটির সদস্য নাসির শেখ ও হাসান শেখ বলেন, “আগে যেমন এই মেলা দেখতে সব ধর্মের মানুষ আসতেন, আশা করি এবারেও একই ভাবে সবাই মেলাকে ঘিরে আনন্দে মেতে উঠবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন