নিছক নামেই জেনেরিক, ওষুধ দামিই

হাসপাতাল চত্বরেই দোকান, হলুদ বোর্ডে সবুজ হরফে ঢালাও বিজ্ঞাপন— ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান। অথচ সস্তার জেনেরিক ওষুধ চাইলে ক্ষুন্ন হচ্ছেন দোকানি। নির্বিকার মুখে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সস্তা নয়, দামি ব্র্যান্ডের ওষুধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৭ ০২:১৩
Share:

বিক্ষোভ: সেই দোকানের সামনে

হাসপাতাল চত্বরেই দোকান, হলুদ বোর্ডে সবুজ হরফে ঢালাও বিজ্ঞাপন— ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান। অথচ সস্তার জেনেরিক ওষুধ চাইলে ক্ষুন্ন হচ্ছেন দোকানি। নির্বিকার মুখে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সস্তা নয়, দামি ব্র্যান্ডের ওষুধ।

Advertisement

নিতান্তই জ্বর কিংবা পেট খারাপ, স্বল্প দামের প্যারাসেটমল ট্যাবলেট চাইলে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে পরিচিত ব্র্যান্ডেড বড়ি। পেট খারাপের জন্য মেট্রজল সিরিজের ওষুধের বদলে আসছে বেশি দামের ক্যাপসুল।

সীমান্তের গ্রাম থেকে লালবাগারে মহকুমা হাসপাতালে এসে তাই মাথা চাপড়াচ্ছেন সুকুর আলি— ‘‘এমন কাণ্ড জানলে কি এ হাসপাতালে আনতাম, ওষুধের দাম মেটাতে গিয়ে তো আমাদেরই বুকে ব্যাথা হচ্ছে!’’

Advertisement

শুধু তাই নয়, সে দোকানে কম্পিউটরাইজড রসিদ (ন্যায্য মুল্যের দোকানে যা বাধ্যতামূলক) চাইলেও জুটছে মুখ ঝামটা। দিনের পর দিন, এ ছবি বদলায়নি। আর, তার জেরেই বৃহস্পতিবার, ওই দোকানের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন হাসপাতালে রোগী দেখাতে আসা পরিবারের লোকজন। পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোরালো হচ্ছে দেখে ছুটে আসতে হয় পুলিশকে। অনেক বুঝিয়ে তাঁদের শান্ত করে পুলিশ।

শিলপুকুর গ্রামের প্রসূতি ফতেমা বিবিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর মাসতুতে ভাই জাকির শেখ বলেন, ‘‘ভর্তুকির দোকানে গেলাম, ওষুধের দাম পড়ল ১২০ টাকা। কিন্তু দাম নিল ৩৩৭ টাকা। রসিদও দিল না।’’

বৃহস্পতিবার সকালে ওই হাসাতালে ভর্তি করানো হয় হাসনেহানা বিবিকে। চোট পেয়ে তাঁর মাথা ফেটেছ। তাঁর বাড়ির লোকের দাবি, ‘‘চিকিৎসকদের কথা মতো দিদির জন্য দু’পাতা ট্যাবলেট কিনি ওই দোকান থেকে। দাম নেওয়ার কথা ৫ টাকা ৬০ পয়সা। নিয়েছে ১০ টাকা। কিন্তু রসিদ দেয়নি।’’

অবস্থা এমন হল কেন?

হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ দেওঘরিয়া অবশ্য এর মধ্যে কোনও অপরাধ দেখছেন না। তাঁর দায়সারা উত্তর, ‘‘সব ওষুধের তো জেনেরিক নাম লেখা যায় না, কম্বাইন্ড ওষুধ হলে ব্যান্ড নেম ছাড়া লিখবে কী করে। তবে, অভিযোগ যখন উঠেছে, দেখি, খোঁজ খবর করতে হবে।’’

কিন্তু ব্যাপারটা তো নিছক ‘খোঁজ খবরের’ নয়, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘প্রশ্নটা নিয়মের। খোঁজ করে উনি কী দেখবেন জানি না, এ ক্ষেত্রে তদন্ত করাটাই দস্তুর।’’

তবে ওই দোকান থেকে কম্পিউটারাইজড রসিদ দেওয়া বাধ্যতামূলক বলেই মনে করেন সুপার। ব্যাপারাটা হাল্কা ভাবে দেখছেন না জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাসও। তিনি বলেন, ‘‘ওষুধ কিনতে কোনওরকম বেনিয়ম হলে প্রয়োজনে সরাসরি আমার সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানান, আমি ব্যবস্থা নেব। আমি থানায় এফআইআর করব।’’

অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন, ওই দোকান-মালিক সিদ্ধার্থ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘কম্পিউটার বিগড়ে গিয়েছিল বলে রসিদ হাতে লিখে দিয়েছি ঠিকই তবে চিকিৎসকেরা যে ওষুধ লিখেছেন তাই দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগের আঙুল, হাসপাতালের সুপার ও চিকিৎসকদের একাংশের দিকে। বলছেন, ‘‘হাসপাতাল জুড়ে দালালরাজ চলছে। চিকিৎসকেরা প্রেসক্রিপশনে ওসুধের ‘জেনেরিক’ নামের বদলে ‘ব্যান্ড নেম’ লিখে দিলে আমি কী করব।’’ তাঁর দাবি, জেনেরিক ওষুধ দিলেও চিকিৎসকেরা অনেক সময়ে তা ফিরিয়ে দেন। সে কারনেই ব্র্যান্ডেড ওষুধ দিতে বাধ্য হন তিনি।

সে কথা কি সুপার শুনছেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন