সেরে গিয়েছে মনের রোগ, বাড়ি নেয় না

সুভানির বাড়ি বিহারের কোটচারা আর রাবিয়ার বাড়ি ইলাহাবাদের মির্জাপুরে। চিকিৎসকেরা জানান, ওঁরা দু’জনেই পুরোপুরি সুস্থ। স্বচ্ছন্দে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি।

মানসিক বিভাগের সামনে বারান্দায় লোহার বেঞ্চিতে ঠায় বসেন থাকেন বছর পঁয়তাল্লিশের রাবিয়া চাকবল। লোহার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে থাকেন সামনের লম্বা বারান্দাটার দিকে। রোজ। প্রায় সারাটা দিন। বাড়ির লোকের অপেক্ষায়। কিন্তু বাড়ির লোক আর আসে না।

Advertisement

মাঝেমধ্যেই নার্সদের জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন সুভানি পোড়া। হাত দিয়ে ইশারা করে বোঝানোর চেষ্টা করেন বাড়ির কথা। সন্তানদের কথা। ওয়ার্ডের জানলার লোহার রড ধরে দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করেন সামনের রাস্তা। ভাবেন, এক দিন বাড়ির লোকেরা ঠিক ফিরিয়ে নিতে আসবে।

সুভানির বাড়ি বিহারের কোটচারা আর রাবিয়ার বাড়ি ইলাহাবাদের মির্জাপুরে। চিকিৎসকেরা জানান, ওঁরা দু’জনেই পুরোপুরি সুস্থ। স্বচ্ছন্দে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।

Advertisement

শুধু তো ওঁরা নন। বাদকুল্লার রেনু সিকদার, সন্দেশখালির কলুপাড়ার হালিমা বিবিরাও সুস্থ। হাসপাতালের তরফে পুলিশকে দিয়ে তাঁদের ঠিকানায় রেডিওগ্রামও করা হয়েছে একাধিক বার। কেউ আসেনি। ওঁরা খালি কেঁদে-কেটে বারবার ডাক্তার-নার্সদের অনুরোধ করেন, ‘আমাদের বাড়ি ফিরিয়ে দিন।’

জোর করে ফিরিয়ে দিলেও লাভ হয় না অনেক সময়ে।

২০১৫ সালে চাপড়ার একটি অসরকারি সংস্থা বছর পঁয়ষট্টির দুলালি সাহাকে বর্ধমানের বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে এসেছিল। মাসখানেক পরে পড়শিরা আবার ফিরিয়ে দিয়ে যান। তাঁরা জানিয়েছিলেন, সন্তানেরা তাঁকে এত মারধর করছে যে তাঁর পক্ষে ওখানে থাকা সম্ভব নয়। ফের তিনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। সেই থেকে এই ওয়ার্ডই আবার তাঁর আস্তানা।

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মনোবিদ সুব্রত বিশ্বাস বলেন, “ওঁদের সামান্য ওষুধ চলছে। এই পরিবেশে থাকলে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া কঠিন। বাড়ি বা অন্য পরিবেশে পাঠাতে পারলেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন।”

বিপাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে এখন মানসিক রোগী আছেন ন’জন। ওই হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “সুস্থ রোগীরাও থেকে যাওয়ায় বাড়তি চাপ পড়ছে। আমরা মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। আমরা চাই, প্রশাসনের তরফে বিকল্প কোন ব্যবস্থা
করা হোক।”

কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক ইউনিস রিসিন ইসমাইল বলেন, “যদি বাড়ির লোক ওঁদের নিতে না আসেন, তা হলে আমরা ওঁদের সরকারি হোমে রাখার চেষ্টা করব।”

যদিও এ সব শুনতে রাজি নন সুভানি-হালিমারা। ওঁরা শুধু দিন গোনেন, কবে বাড়ির লোক এসে বলবে— ‘চলো’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন