মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে

আয়া-রাজ, প্রতিবাদ পথে নেমে

রোগীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ‘‘এই হাসপাতালে আয়া রাখা বাধ্যতামূলক। আয়া না রাখলে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবায় গাফিলতি দেখা দেয়।’’ ২৪ ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টা করে মোট দু’জন আয়া রাখতে হয়। ১২ ঘণ্টার জন্য তাদের দিতে হয় ১৫০ টাকা করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ০১:২১
Share:

হাসপাতালের সামনে অবস্থানে রোগীর আত্মীয়েরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রোগীর বাড়ির লোকেদের মারপিটের ঘটনার পর এক দিন পার হতে না হতেই ফের উত্তাল হল মুর্শিদাবাদ মে়ডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এ বার আয়াদের সঙ্গে হাতাহাতি হল রোগীর বাড়ির লোকেদের।

Advertisement

আয়াদের বিরুদ্ধে জুলুমবাজির অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার সকালে রাস্তা অবরোধ করলেন রোগীর বাড়ির লোক। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে। ব্যস্ত সময়ে অবরোধের জেরে স্টেশন রোডে যানজট তৈরি হয়। আয়াদের নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে সব পক্ষই।

রোগীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ‘‘এই হাসপাতালে আয়া রাখা বাধ্যতামূলক। আয়া না রাখলে রোগীর চিকিৎসা পরিষেবায় গাফিলতি দেখা দেয়।’’ ২৪ ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টা করে মোট দু’জন আয়া রাখতে হয়। ১২ ঘণ্টার জন্য তাদের দিতে হয় ১৫০ টাকা করে। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার জন্য ৩০০ টাকা।

Advertisement

অভিযোগ, এ ছাড়াও আয়া ও ট্রলি চালকদের দাবি মতো বকশিস মেটাতে হয়। বহরমপুর স্টেশন সংলগ্ন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই হাসপাতালেরই একটি শাখা ‘মাতৃসদন’। সেখানে বকশিস আদায়ে রয়েছে হরেক প্রথা। অভিযোগ, এখানে কন্যাসন্তান প্রসব হলে ৫০০ টাকা ও পুত্রসন্তানের জন্য লাগবে তার দ্বিগুণ। রোগীর ছুটি হলে ফের এক দফা বকশিসের জুলুম চলে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ‘আয়া-রাজ’-এর অস্বিত্বই স্বীকার করতে নারাজ সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল। তিনি বলেন, ‘‘এখানে আয়া নিতে বাধ্য করা হয়, এমন লিখিত অভিযোগ আজ পর্যন্ত কেউ আমার কাছে করেননি। ’’ তাঁর মতে, ‘‘রোগীর সহায়তার জন্য ভাড়া করা ওই ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও সচিত্র পরিচয়পত্র হাসপাতালে জমা রাখা হয়।’’ সুপার যা-ই বলুন, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৩টি তলাতেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৩ ধরনের আয়া। তিন তলায় ও দোতলায় রয়েছে তৃণমূল প্রভাবিত নীল পাড়-সাদা শাড়ি এবং কংগ্রেস প্রভাবিত সবুজ পাড়-সাদা শাড়ির আয়া। আর এক তলায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ ছাপাশাড়ির আয়া।

আয়াদের দাবি, তাঁদের কোনও দল নেই। বহু বছর আগে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা ‘ইন্টারভিউ’-এর ভিত্তিতে আমাদের নিয়োগ করেছেন। বছর দুয়েকের মধ্যে তিনতলা-দু’ তলায় নিয়োগ করা আয়াদের একটি অংশের অত্যাচারের ঝড় এসে পড়ছে সবার উপরে।’’ সুতি থানার সুজাপুরের ৭০ বছরের বৃদ্ধ জীতেন্দ্র দাস এই হাসপাতালে চার দিন ভর্তি ছিলেন। তাঁর ছেলে বরকত দাস বলেছেন, ‘‘আমাদের বিপিএল কার্ড রয়েছে। দিনমজুরি করি। তবুও আমাদের আয়া রাখতে হয়েছিল। বাবাকে ভর্তির সময় ১৫০ টাকা ও ছুটির সময় ১০০ টাকা ট্রলি চালককে দিতে বাধ্য হয়েছি।’’

প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমরা আয়াদের পুনর্বাসন চাই।’’ তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র অশোক দাস এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আয়া সমস্যা মেটাতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন