ফরাক্কার তাণ্ডবে ধৃত ২১

জাতীয় সড়কে তাণ্ডবের ঘটনায় সরতে হল আইসি-কে

ছাত্রীমৃত্যুর জেরে জাতীয় সড়কে তাণ্ডবের পরের দিনই সরিয়ে দেওয়া হল ফরাক্কা থানার আইসি-কে। আড়াই ঘণ্টা ধরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রেখে সাতটি বাস-লরি পুড়িয়ে দেওয়া ও পুলিশকে আক্রমণে গ্রেফতার হল ২১ জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০০:৪৫
Share:

ছাত্রীমৃত্যুর জেরে জাতীয় সড়কে তাণ্ডবের পরের দিনই সরিয়ে দেওয়া হল ফরাক্কা থানার আইসি-কে। আড়াই ঘণ্টা ধরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রেখে সাতটি বাস-লরি পুড়িয়ে দেওয়া ও পুলিশকে আক্রমণে গ্রেফতার হল ২১ জন।

Advertisement

শনিবার রাত পর্যন্ত নিউ ফরাক্কা মোড় এলাকায় ধড়পাকড় জারি ছিল। কিন্তু তার মধ্যেই কোচবিহারে মিসিং পার্সনস স্কোয়াডে বদলি করে দেওয়া হয় ফরাক্কা থানার আইসি সমীররঞ্জন লালাকে। ফরাক্কা থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বহরমপুরের সার্কেল ইনস্পেক্টর উদয়শঙ্কর ঘোষকে।

শুক্রবার গোলমালের শুরুতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের নিউ ফরাক্কা মোড়ে গিয়ে জনতার মারে জখম হন এসডিপিও (জঙ্গিপুর) প্রবীণ প্রকাশ ও তাঁর নিরাপত্তারক্ষী। ফরাক্কা থানার আইসি তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু প্রথম দফায় পিছু হটতে হয়। পরে যখন বড় বাহিনী আসে, পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছে। সাতটি বাস ও লরি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আড়াই ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।

Advertisement

এর জেরেই কি সরতে হল ফরাক্কা থানার আইসি-কে? সরাসরি উত্তর মেলেনি জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের কাছে। তিনি শুধু বলেন, ‘‘বদলির চাকরি, বদলি তো হবেই।’’ বারবার চেষ্টা করেও সমীররঞ্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে শাসকদলের নেতারা যে পুলিশের কাজে সন্তুষ্ট নন, তা পরিষ্কার। এ দিনই জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, ‘‘এই ঘটনায় কারও ইন্ধন থাকতে পারে। কিন্তু পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়।’’

মোট ৫৯ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা-সহ ১৩টি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। ধরপাকড়ের ভয়ে গোটা এলাকা প্রায় পুরুষশূন্য। ধৃত ২১ জনই নিউ ফরাক্কা মোড় লাগোয়া ২ নম্বর ব্যারাজ কলোনি, খুন্তিপাড়া, লোহাপট্টিপাড়ার বাসিন্দা। শনিবার তাদের জঙ্গিপুর আদালতে তোলা হলে ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম মনোজিৎ সরকার আট জনকে আট দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বাকিদের জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ নিউ ফরাক্কা হাইস্কুলে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ে লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় একাদশ শ্রেণির ছাত্রী, ফরাক্কা ২ নম্বর নিশিন্দ্রা কলোনির রুম্পা হালদার (১৭)। খবর পেয়ে সহপাঠীরা ছুটে আসে। তাদের সঙ্গে জুটে যায় কিছু যুবক। রাস্তা অবরোধ করে বাস-লরি ভাঙচুর শুরু হয়। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক চেষ্টা করেও থামাতে পারেননি। পরে পুলিশের বড় বাহিনী লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শনিবার জঙ্গিপুরে ময়নাতদন্তের পরে বিকেলে রুম্পার মৃতদেহ পৌঁছয় বাড়িতে। তার মা অঞ্জনা হালদার আগের দিন একটি দানাও কাটেননি দাঁতে। শুধু কেঁদে চলেছেন। সন্ধ্যায় গাঁধীঘাটে শেষকৃত্য করার সময়েও বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন রুম্পার বাবা বীরেন হালদার। বলেন, “চায়ের দোকান করে খুব কষ্টে ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছি। রুম্পা ছিল সবচেয়ে ছোট। এ ভাবে সব শেষ হয়ে যাবে, ভাবতে পারিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন