ঝিঙে কিংবা পটলের ক্ষেতে ইতিউতি ঝুলছে রঙিন টিফিন কৌটো। যেন কেউ খেলার ছলে পটলমাচা থেকে রঙিন ঢাকনাওয়ালা প্লাস্টিকের কৌটোগুলো ঝুলিয়ে দিয়েছে। সবুজ ক্ষেতে লাল-সবুজ-হলুদ টুপি পড়া কৌটোগুলো দেখতে মন্দ লাগছে না।
কিন্তু খামোখা ফসলের ক্ষেতে কৌটো ঝুলছে কেন? প্রশ্নটা করতেই ক্ষেতের মালিক চন্দন বণিক, তপন বিশ্বাসেরা জানালেন, ওগুলো কোনও কৌটো নয়। ওগুলো তো ফাঁদ!
সব্জি ক্ষেত বা ফলের বাগানে এক ধরনের মাছির মতো পোকা হয়। যারা লাউ-কুমড়ো-ঝিঙে-পটল-করলা থেকে শুরু করে আম-লিচু প্রায় সব রকম ফসলের ক্ষতি করে। ‘ফলের মাছি’ নামে পরিচিত সেই পোকা মারতেই ঝোলানো হয়েছে ওই কৌটো-ফাঁদ বা ‘ফেরোমেন ট্র্যাপ’। কম খরচে এর থেকে নিরাপদ এবং কার্যকরী কীটনাশক আর হয় না বলেই দাবি চাষিদের।
বর্ধমানের সহ-কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষের কথায়, ‘‘চাষিরা অনিয়মিত ভাবে জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার করেছেন অপরিমিত মাত্রায়। যা আসলে কৃষি-বিষ। ফসলে কীটনাশকের প্রয়োগের কত দিন পর সেই সব্জি বা ফল খাওয়া যায়, তার নির্দিষ্ট মাপ আছে। কিন্তু চাষিরা লাভের জন্য আগের দিন ফসলে ওষুধ প্রয়োগ করে, পরের দিনই বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। সেই সব ফল বা সব্জির বিষ মানুষের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।’’
এ বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞ লক্ষ্মণ মণ্ডল জানান, ওই ফাঁদে স্ত্রী পোকার গায়ের গন্ধ বা ফেরোমেন ব্যবহার করা হয়েছে। যার আকর্ষণে পূর্ণাঙ্গ পুরুষ পোকা ওই ফাঁদে আকৃষ্ট হয় এবং আটকে পরে। কৌটো ভিতরে স্ত্রী পোকার গন্ধযুক্ত ক্যাপসুল থাকে। পুরুষ পোকারা ফাঁদে ধরা পড়ে গেলে ফল বা সব্জির উপর বংশবিস্তার করতে পারে না। ক্ষেতে পোকামাকড়ের উপদ্রব বন্ধ হয়ে যায়। ফসল ক্ষেতে ঝোলানো কৌটো ফাঁদ খুললেই দেখা যায় ভিতরে ভর্তি হয়ে আছে ক্ষতিকর ফলের মাছি।
চাষিরা জানাচ্ছেন, দামেও অত্যন্ত সস্তা ওই ফাঁদ। খোলা বাজারে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে ওই ফাঁদ বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে তিনটি ফাঁদই যথেষ্ট বলে জানাচ্ছেন ওঁরা। একটি ফাঁদের কার্যকারিতা তিন মাস। তিন মাস পরে ভিতরের ক্যাপসুলটা পাল্টে নিলেই হয়। ক্যাপসুলের দাম ৭০-৮০ টাকার মধ্যে। অথচ এক বিঘা জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে এক-একবারে প্রায় পাঁচশো টাকা খরচ হয়। একটি মরশুমে আট থেকে দশ বার কীটনাশক স্প্রে করতে হত। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বলে দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়ছে ফাঁদের।
(নিজস্ব চিত্র)