চাপড়ায় খুন স্বামী, গুলি ছেলের বুকে

ওই ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ গ্রেফতার করে শিবিরেরই এক বাসিন্দা ঔরঙ্গজেব ওরফে লম্বু শেখকে। নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “খুনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

সুস্মিত হালদার

চাপড়া শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাইরে গুলির শব্দ শুনেই ছুটে এসেছিলেন মহিরম বিবি। তাঁর অভিযোগ, সোমবার রাতে তাঁর চোখের সামনেই গুলি করে খুন করা হয় স্বামী কওসর পেয়াদাকে। খুনের চেষ্টা করা হয় ছেলে জিন্নাতকেও। চাপড়ার শিবিরের ওই ঘটনার পরে চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় দু’জনকেই। সেখানে কওসরকে মৃত বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসক। জখম জিন্নাত কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

ওই ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ গ্রেফতার করে শিবিরেরই এক বাসিন্দা ঔরঙ্গজেব ওরফে লম্বু শেখকে। নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “খুনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ দিকে, ঘটনার পর থেকে মহিরমকে সামলাতে পারছেন না তাঁর বাড়ির লোক। তিনি বলছেন, “চোখের সামনেই ওরা সব শেষ করে দিল গো!’’ ওরা কারা? চোখের জল মুছে মহিরম বলছেন, ‘‘ওদের নাম বলতে পারব না। তাহলে আমার বাকি ছেলেদেরও ওরা শেষ করে দেবে!”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, নতুন বাড়ি থেকে বের হয়ে কাছেই পুরনো বাড়িতে যাচ্ছিলেন জিন্নাত। তার আগে অবশ্য বাজারে গণ্ডগোল হয়েছে। অভিযোগ, জিন্নাতকে সামনে পেয়েই তাঁর উপরে চড়াও হয় বেশ কয়েক জন। মহিরমের দাবি, “গুলির শব্দ শুনেই তড়িঘড়ি বাইরে ছুটে আসি। ততক্ষণে ওরা আমার ছেলের বুকে গুলি চালিয়ে দিয়েছে। মাথায় বন্দুকের বাট দিয়ে মারতেই ও রাস্তায় পড়ে যায়। তখন স্বামীকে সামনে পেয়ে তার বুকেও গুলি চালিয়ে দেয় ওরা। ছুটে এসেছিল ছোট ছেলে রকিবুলও। তাকেও মারধর করা হয়।’’

Advertisement

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত কওসরের ভাই প্রেমচাঁদ শেখ স্থানীয় তৃণমূল নেতা। রবিবার শিবির বাজারে প্রেমচাঁদের সঙ্গে সদ্য সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া আমিরচাঁদ শেখের গণ্ডগোল হয়। অভিযোগ, প্রেমচাঁদের অনুগামীরা চড়াও হয় আমিরচাঁদের বাড়িতে। সোমবার সন্ধ্যায় দু’পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মিটিয়ে দেন স্থানীয় অঞ্চল তৃণমূলের নেতারা। সেই রাতে প্রেমচাঁদের দাদা কওসর ও ভাইপো জিন্নাতকে গুলি করা হয়।

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃত ওরঙ্গজেব ওরফে লম্বু বছর চারেক আগে কওসরের এক আত্মীয়াকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে কওসরদের আপত্তিতেই তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সেই রাগ থেকেই লম্বু এমন কাণ্ড করেছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সম্প্রতি শিবিরে গদাধরের মেলায় প্রেমচাঁদ নাকি আমিরচাঁদ, কাদের প্রভাব থাকবে তা নিয়েও টানাপড়েন চলেছে। সদ্য দলে আসা আমিরচাঁদদের ‘বাড়াবাড়ি’ও মেনে নিতে পারছিলেন না প্রেমচাঁদরা।

দলের একাংশের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলেরই অন্য গোষ্ঠীকে বিপাকে ফেলতে পরিকল্পিত এই খুন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলছেন, “এই খুনের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। তবে যারাই এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, পুলিশ যেন তাদের গ্রেফতার করে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন