ইদের আনন্দে ভাটা জলঙ্গিতে

একের পর এক জঙ্গি হানায় তেতে রয়েছে বাংলাদেশ। আর তারই আঁচ লাগল এ-পার বাংলাতেও। পুলিশ ও বিএসএফের বাড়তি নজরদারিতে ভাটা পড়ল ইদের আনন্দেও!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাতা

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০১:৪২
Share:

ইদের দিনে এখানেই জমত ভিড়। — নিজস্ব চিত্র

একের পর এক জঙ্গি হানায় তেতে রয়েছে বাংলাদেশ। আর তারই আঁচ লাগল এ-পার বাংলাতেও। পুলিশ ও বিএসএফের বাড়তি নজরদারিতে ভাটা পড়ল ইদের আনন্দেও!

Advertisement

পদ্মার একটা বাঁক। জলঙ্গি বাজার লাগোয়া ওই এলাকায় প্রকৃতি নিজেকে মেলে ধরেছে উজাড় করে। চরের কাশবন, কুলকুল করে বয়ে চলা পদ্মা আর মাথার উপর পাখিদের ওড়াউড়ি। বাড়তি পাওনা ছোট নৌকায় বসে মোবাইলে ছবি তোলা।

জলঙ্গির ওই এলাকায় দুপুরের পর থেকেই তাই ভিড়টা জমাট বাঁধে। ইদের দিনে সেই ভিড়টা যে আরও বাড়ে তা বলাই বাহুল্য। হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক সীমান্ত। কাঁটাতার না থাকায় এখানে সীমানা নিয়ন্ত্রণ করে পদ্মা। সর্বক্ষণ নজরদারি চালায় বিএসএফও। তবে পদ্মার পাড়ে ভিড় নিয়ে অন্য বার তেমন মাথাব্যথা না থাকলেও এ বারে ইদের দিন ছবিটা ছিল অন্যরকম। দিনের বেলা বিএসএফ তেমন কিছু না বললেও বিকেলের পর থেকে পদ্মার ধারেকাছে তারা কাউকে ঘেঁষতে দেয়নি বলে অনুযোগ করেছেন জলঙ্গির পাড়ে বেড়াতে যাওয়া অনেকেই।

Advertisement

গত শুক্রবার রাতে ঢাকার গুলশনে এক স্প্যানিশ রেস্তোরাঁতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বৃহস্পতিবার, ইদের নমাজের আগে কিশোরগঞ্জে ফের সন্ত্রাসবাদী হামলায় এক হামলাকারী-সহ মোট চার জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম অন্তত ১২ জন। সাত দিনের মধ্যে এমন দু’টি ঘটনার পরে স্বভাবতই কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয় বিএসএফ। এ দিনও বিএসএফের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘‘আমরাও চাই না উৎসবের সময় কেউ মনখারাপ করে ফিরে যাক। কিন্তু এ বারের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। একেই এখানে কাঁটাতার নেই। কোনও রকম বিপদ যাতে না ঘটে সে জন্য আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। কিন্তু ভিড়ের সুযোগ এই এলাকায় যাতে কোনও গোলমাল না হয় তাই এ বারে এমন পদক্ষেপ করতে হয়েছে।’’

জলঙ্গির ওই এলাকা মুর্শিদাবাদে হলেও নদিয়ার প্রচুর মানুষ ইদের সকাল থেকেই ভিড় করেন ওখানে। এ বারেও তাই হয়েছিল। কেউ আবার বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দেখাতে। দুপুর পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু বিকেলের পর থেকেই শুরু হয় বিএসএফের কড়াকড়ি। জলঙ্গির বাসিন্দা সন্তু সাহার কথায়, ‘‘একটা সময় পদ্মার ভাঙন আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু এই একটুকরো বিনোদনের জায়গা করে দিয়েছে। সেখানে গিয়ে মানুষ স্বস্তির শ্বাস নিতে পারে। বিশেষ করে বর্ষায় এই পদ্মার পাড় এতটাই মনোরম হয়ে ওঠে যা দেখতে ইদের দিন নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের বহু মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন। এখন দেখছি বাংলাদেশের ঘটনার জন্য মানুষের শ্বাস নেওয়ার সুযোগও থাকবে না।’’

ইদের দিন গাড়ি ভাড়া করে ডোমকল, ইসলামপুর, রানিনগর ও করিমপুর থেকে অনেকেই এসেছিলেন জলঙ্গির বাঁকে। ডোমকলের সরিফা বিবির কথায়, ‘‘সারাদিন ইদের রান্না সামলে সন্ধ্যায় সকলের সঙ্গে জলঙ্গির পাড়ে এসেছিলাম একটু শান্তিতে বসব বলে। কিন্তু বিএসএফ মুখের উপর পরিষ্কার জানিয়ে দিল—‘এখন ঢোকা যাবে না।’ কী বিপদ বলুন তো!’’ একই অভিজ্ঞতা করিমপুরের সাবির আলির। তাঁর কথায়, ‘‘গোটা পরিবার বায়না ধরেছিল পদ্মাপাড়ে যাবে। নিয়েও গিয়েছিলাম বিকেলের পরে। কিন্তু গুলশন ও কিশোরগঞ্জের ঘটনার জন্যই বিএসএফ আমাদের ঢুকতেই দেয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন