যা জানার, ওঁকে জিগ্যেস করুন

অঘ্রায়ণের সকাল। জমাট কুয়াশায় ঢাকা কাঁটাতার পেরিয়ে বাড়ির কর্তা গিয়েছেন খেতের কাজে। নিকোনো উঠোনের এক প্রান্তে গিন্নিও বসে পড়ছেন ধান সিদ্ধ করতে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:১৪
Share:

অঘ্রায়ণের সকাল। জমাট কুয়াশায় ঢাকা কাঁটাতার পেরিয়ে বাড়ির কর্তা গিয়েছেন খেতের কাজে। নিকোনো উঠোনের এক প্রান্তে গিন্নিও বসে পড়ছেন ধান সিদ্ধ করতে। সেই সময় ভিন্‌ গাঁ থেকে এক আগন্তুক বাড়িতে এসে জানতে চাইলেন, ‘‘প্রধান বাড়িতে আছেন? তাঁর সঙ্গে একটু দেখা করতাম।’’

Advertisement

তড়িঘড়ি ঘোমটা টেনে মহিলা অনায়াসে বলললেন, ‘‘প্রধান তো মাঠে গিয়েছেন। একটু অপেক্ষা করুন।’’ অবাক হয়ে সেই আগন্তুক জানতে চাইলেন, ‘‘প্রধান তো মহিলা। তিনিও মাঠে যান নাকি?’’ এ বারে লাজুক হাসেন ওই মহিলা, ‘‘না, মানে আমাকেই সবাই মিলে প্রধান করে দিল। কিন্তু আমি তো ও সব কিছুই জানি না। আমার স্বামীই সবটা দেখভাল করেন।’’

নির্বাচনে মহিলা সংরক্ষিত আসনে দাঁড়িয়ে ওঁরা নির্বাচনে জিতেছেন। কেউ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, কেউ আবার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। অথচ নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বহু এলাকায় সেই মহিলা নয়, তাঁর স্বামীকেই প্রধান কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলে জানেন এলাকার লোকজন। সেই মহিলারাও জানাচ্ছেন, ঘর-সংসার সামলে পঞ্চায়েতের কাজ করাটা সত্যিই কঠিন। ফলে সেই কাজের দায়িত্ব স্বামীদের কাঁধে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকা যায়।

Advertisement

আর সেই নিশ্চিন্তে থাকার ফল যে কী হতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ভরতপুর ২ এর বিডিও অর্ণব চির্ন্যার। ওই ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ছ’টিতে মহিলা প্রধান। অথচ প্রতি মাসে ব্লক অফিসের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকছেন বেশিরভাগ মহিলা প্রধান। অথচ পঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়নের জন্য সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকাটা জরুরি। শিমুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাহিদা বেগম বলছেন, ‘‘সংসারের কাজকর্ম সেরে পঞ্চায়েতে যেতেই দেরি হয়ে যায়। বিডিও-র বৈঠকে মাঝেমধ্যে যাই। তবে সচিব তো নিয়মিত ওই যান।” অর্ণববাবু জানান, বহু বার প্রধানদের উপস্থিত থাকার ব্যাপারে কড়া নির্দেশ জারি করেও কোনও ফল মেলেনি। সচিবদের কাছ থেকে সমস্ত রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এলাকার উন্নয়নের কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়।

পঞ্চায়েত সমিতির কাজ সামলাতে তাঁর স্বামীই যে বড় সহায় তা কবুল করছেন কৃষ্ণনগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের আসমানতারা বিবি। তিনি বলছেন, ‘‘আমি কতটুকুই বা বুঝি! বাড়িতে স্বামীর সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিই। প্রয়োজনে তিনিও পঞ্চায়েত সমিতিতে আসেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন