গুরুর কৃপায় লক্ষ্মীলাভ করে খুশি ব্যবসায়ীরা

রথযাত্রা থেকে ঝুলন পূর্ণিমা—এই সময়টাকে এতদিন ব্যবসা-বানিজ্যের ‘অফ সিজন’ বলেই জানতেন নবদ্বীপের মানুষ। একে বর্ষাকাল তার উপর দুর্গাপুজোর বেশ কয়েক মাস দেরি। বাজারে কেমন যেন একটা মরামরা ভাব। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ছবিটার বদল ঘটছে। যে কোন উৎসবে মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণের প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০২:৩২
Share:

নবদ্বীপে ফুলের বাজারে ভিড়।—নিজস্ব চিত্র

রথযাত্রা থেকে ঝুলন পূর্ণিমা—এই সময়টাকে এতদিন ব্যবসা-বানিজ্যের ‘অফ সিজন’ বলেই জানতেন নবদ্বীপের মানুষ। একে বর্ষাকাল তার উপর দুর্গাপুজোর বেশ কয়েক মাস দেরি। বাজারে কেমন যেন একটা মরামরা ভাব।

Advertisement

কিন্তু কয়েক বছর ধরে ছবিটার বদল ঘটছে। যে কোন উৎসবে মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণের প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তাই ‘ব্যাসপুজো’ বা গুরু পূর্ণিমার মতো নিতান্ত ব্যক্তিগত উৎসবও ব্যাপকতর চেহারা নিয়ে হাজির হচ্ছে প্রতি বছর। যার জেরে মঙ্গলবার, নবদ্বীপের সাপ্তাহিক বাজার বন্ধের দিনেও দোকানের সামনে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতাদের ভিড় দেখে অনেক ব্যবসায়ীই দোকানের ঝাঁপ খুললেন।

বিভিন্ন মঠমন্দির মিলিয়ে নবদ্বীপে শতাধিক গুরুবাড়ি রয়েছে। শিষ্য গুরুদেবকে এ দিন শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছে বহুদিন ধরে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে নবদ্বীপে এটা বিরাট এক উৎসবের চেহারা নিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে। সোমবার থেকেই শিষ্যেরা আসতে শুরু করেন। সন্ধ্যা থেকেই নবদ্বীপের বাজার বহিরাগত শিষ্যদের দখলে চলে যায়।

Advertisement

যার নিট ফল— দু’টাকার গাঁদা ফুলের মালা বিকিয়েছে কুড়ি টাকায়। রজনীগন্ধা বা গোলাপের দর বিয়ের মরশুমকে টেক্কা দিয়েছে। রজনীগন্ধার প্রমান মাপের মালা বিক্রি হয়েছে একশো থেকে দেড়শো টাকায়। একই ভাবে মিষ্টি, ফল এবং শাড়ি, ধুতি বা চাদরের কেনাবেচা ছিল চোখে পড়ার মতো। সাধারণত ফুল মালা, ফল, মিষ্টি দিয়ে গুরুপুজো করাই রীতি। সোমবার রাত বাড়তেই ফাঁকা হয়ে যায় শহরের বেশির ভাগ মিষ্টির দোকান।

গুরু পূর্ণিমার উৎসব ঘিরে অসময়েও নবদ্বীপের খুচরো ও পাইকারি বাণিজ্যে ভরা জোয়ারে খুশি ব্যবসায়ীরা। ফল ও সব্জির পাইকারি ব্যবসায়ী মোহন মণ্ডল বলেন, “পঞ্চাশ বছর ধরে ব্যবসা করছি। গুরুপূর্ণিমাও যে এতবড় একটা উৎসব হয়ে উঠবে, তা ভাবতেও পারিনি।’’

এ বার গুরুবাড়িতে শিষ্যরা কেমন ভিড় করেছেন? নবদ্বীপ বলদেব মন্দিরের কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী জানান, “এ বার প্রায় হাজার সাতেক শিষ্য গুরুপুজো করেছেন।’’

ছবিটা কমবেশি একই রকম সমাজবাড়ি, মদনমোহন মন্দির, বড় আখড়া, কাঙালঠাকুর বাড়ি, শ্যামের মন্দির, কেশবজী গৌড়ীয় মঠ বা দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠে। হাজার হাজার মানুষ এ দিন নবদ্বীপে এসেছিলেন গুরুপুজা করতে। এদের প্রসাদের জন্য যাবতীয় কেনাকাটা স্থানীয় বাজার থেকেই হয়। নবদ্বীপ বড়বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী কালু দেবনাথের কথায়, “গুরু পূর্ণিমায় তিনদিনের কেনাবেচা একদিনে হয়েছে।”

নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস বলেন, “সাত আট বছর ধরেই ছবিটা বদলাচ্ছিল। শেষ বছর দুয়েক ধরে ভিড় যেন উপচে পড়ছে। পর্যটনের উপর নির্ভরশীল নবদ্বীপে গুরুপূর্ণিমা এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি বানিজ্যিক উৎসব হয়ে উঠছে।’’

শুধু সব্জি বাজারই নয়, এ দিন পরিবহন ব্যবস্থাও প্রাণ পায়। এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি টোটো চলে নবদ্বীপে। অনেক সময় যাত্রীহীন টোটো নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় চালকদের। এ দিনের ছবিটা ছিল বিলকুল ভিন্ন। বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে চার জনের বদলে টোটোতে সওয়ার হয়েছেন গড়ে ছ’জন যাত্রী। ভিড়ে ঠাসা টোটোয় চেপে লোকজন পৌঁছে গিয়েছেন গুরু বাড়িতে।

আর সেই ভিড়ে সামিল হয়েছেন কলকাতার ইএনটি বিশেষজ্ঞ কিশোর বিশ্বাস থেকে কাটোয়ার রেডিওলজিস্ট সঞ্জীব সাহা। কিংবা করিমপুরের সাদামাটা মাঝবয়সী মহিলা উমা মিত্র থেকে কাকদ্বীপের মৃৎশিল্পী সুবল হালদার, সকলেই।

আর এই ভিড়ই চাঙ্গা করল নবদ্বীপের বাজারকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন