কাশীপুরে আগুন, ত্রাণ নিয়ে বিতর্ক

খেত থেকে গম উঠে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন আগেই। সেই জমির আগাছা পরিষ্কারের জন্য আগুন দিয়েছিলেন স্থানীয় এক চাষি। ঠিক সেই সময়ে কালবৈশাখীর ঝড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে লাগোয়া এলাকায়। শনিবার বিকেলের ওই ঘটনায় পুড়ে যায় ডোমকল থানার কাশীপুর গ্রামের ৩৩টি বাড়ি। ঘটনার পরে করিমপুর ও বহরমপুর থেকে দমকলের ৩টি ইঞ্জিন আসার আগেই অবশ্য গ্রামবাসীরা আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫০
Share:

পুড়ে যাওয়ার পর। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত।

খেত থেকে গম উঠে গিয়েছে বেশ কয়েকদিন আগেই। সেই জমির আগাছা পরিষ্কারের জন্য আগুন দিয়েছিলেন স্থানীয় এক চাষি। ঠিক সেই সময়ে কালবৈশাখীর ঝড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে লাগোয়া এলাকায়। শনিবার বিকেলের ওই ঘটনায় পুড়ে যায় ডোমকল থানার কাশীপুর গ্রামের ৩৩টি বাড়ি। ঘটনার পরে করিমপুর ও বহরমপুর থেকে দমকলের ৩টি ইঞ্জিন আসার আগেই অবশ্য গ্রামবাসীরা আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। ওই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গিয়েছে বাড়ির যাবতীয় জিনিসপত্র। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে প্রায় ২০ টি ছাগল। তবে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ত্রাণ বিলিকে কেন্দ্র করেও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

Advertisement

দমকল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ গ্রামের এক চাষি নিজের জমিতে আগাছা পরিষ্কারের জন্য আগুন দিয়েছিলেন। আচমকা ঝড়ে সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তেই এমন বিপত্তি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এ ভাবে গম উঠে যাওয়ার পরে জমিতে আগুন দেওয়া এখানকার প্রচলিত পদ্ধতি। সব চাষিই এ ভাবেই জমি পরিষ্কার করেন। তবে দমকলের এক আধিকারিক জানান, এর আগেও এই একই ভাবে জলঙ্গি, ডোমকল ও করিমপুর এলাকার বহু অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। চাষিদের নিষেধ ও সচেতন করেও কোনও ফল মেলেনি। এ ভাবে জমিতে আগুন দেওয়ার একটা ঝুঁকি সবসময় থাকে।

কাশীপুরের পাশের গ্রাম ধুলাউড়ির বাসিন্দা গৌরব মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে তখন হনুমান মন্দিরে অনুষ্ঠান চলছিল। হঠাৎ দেখি আগুনের লেলিহান শিখা। আমরা সকলে ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঝড়ের দাপট থাকায় আগুন নেভাতে অনেক সময় লেগেছে। মন্দিরের পক্ষ থেকে পরিবারগুলির খাবারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।’’ গ্রামবাসী মনতোষ শীল বলেন, ‘‘প্রাণ নিয়ে পালানোর সময়ে গায়ের পোশাকটুকু ছাড়া আর কিছুই বাঁচাতে পারিনি। ছেলেমেয়েদের বইখাতাও পুড়ে গিয়েছে। কী ভাবেই বা ঘর মেরামত করব, আর কী ভাবেই বা চেলেমেয়ের বইখাতা কিনে দেব বুঝতে পারছি না।’’

Advertisement

ওই অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে ধুলাউড়ি উদয়ন সমিতি, ডোমকল স্পোটিং ক্লাব-সহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের পাশাপাশি রবিবার ওই এলাকায় ত্রাণ নিয়ে পৌঁছেছে রাজনৈতিক দলগুলিও। তবে প্রশাসনের তরফে রবিবার বিকেল পর্যন্ত কোনও ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়নি অসহায় পরিবারগুলিকে।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীদের একাংশের বাধায় এ দিন কাশিপুরের ওই পরিবারগুলির তালিকা তৈরি করে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। অভিযোগ, কংগ্রেস তাদের মর্জি মতো তালিকা তৈরি করেছে। ডোমকলের বিডিও রবীন্দ্রনাথ মিশ্র অবশ্য কোনও রাজনৈতিক দলের নাম না করে বলেন, ‘‘কিছু মানুষের বাধায় পরিবারগুলির তালিকা তৈরি করে ত্রাণের সামগ্রী বিতরণ সম্ভব হয়নি।’’

ডোমকল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কংগ্রেসের প্রদীপ চাকির দাবি, ‘‘আমাদের কেউ ত্রাণ বিলিতে বাধা দেয়নি। এক তৃণমূল নেতার ফোন পেয়ে বিডিও ত্রাণের সামগ্রী রাস্তা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। পঞ্চায়েত সমিতিকে এড়িয়ে তৃণমূল নেতাদের হাত দিয়ে বিডিও ত্রাণ বিলি করতে চাইছেন।’’ যদিও অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সৌমিক হোসেন বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাজে আমরা হস্তক্ষেপ করি না। আর আমরা নিজেরাও ওই গ্রামে ত্রাণ বিলি করে এসেছি।’’

যদিও ডোমকলের মহকুমাশাসক পুস্পেন্দু মিত্রের দাবি, ‘‘প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলির বাধায় একটি সমস্যা হলেও পরে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement