Firecrackers Sale hampered

বাজি বাজারে জমছে না ব্যবসা

কল্যাণীর কাঁচরাপাড়া পঞ্চায়েতের চর-কাঁচরাপাড়া বাজারে এত দিন বাজি বিক্রি হত। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসতেন বাজি কিনতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নদিয়া শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৬
Share:

আলোর উৎসবে বাজি বাজার না জমলেও দীপাবলির আগে চলছে বৈদ্যুতিক আলোর বিক্রি। কৃষ্ণনগরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।

শারদ উৎসবের মরসুম অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও জেলার কোথাও সে ভাবে জমছে না বাজির বাজার। বাজি কেনাবেচা নিয়ে নতুন সরকারি নিয়মের গেরোয় প্রবল অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন বাজি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কথায়, বাজি কেনাবেচা কী ভাবে হবে, তা নিয়ে নতুন সরকারি নির্দেশিকার জেরে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

সরকারি নির্দেশ মতো এ বার বাজির উৎপাদন থেকে কেনাবেচা সবই হতে হবে লোকালয় থেকে দূরে নির্দিষ্ট বাজারে। অথচ, সেই বাজারেরই দেখা নাই। নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর বা রানাঘাটের মতো শহর কিংবা তেহট্ট, কালীগঞ্জ, করিমপুর— কোথাও মিলবে না তেমন কোনও বাজি বাজার। হাতেগোনা যে দু-তিনটি জায়গায় বাজি বাজার বসেছে, তার মধ্যে নবদ্বীপের বাজি বাজার চালু হওয়ার ঠিক চার দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কল্যাণী শহর থেকে বহু দূরে চর-কাঁচরাপাড়ায় একটি ইটভাঁটায় জনাকয়েক বিক্রেতা বাজি নিয়ে বসেছেন। কিন্তু ক্রেতা নেই। একদা রানাঘাট অঞ্চলের বাজি বিক্রি বা উৎপাদন কেন্দ্র ছিল গাংনাপুর। বিস্ফোরণের কারণে কয়েক বছর আগে সেখানে সব বন্ধ হয়ে যায়। এখন দেবগ্রাম পঞ্চায়েতের বাঘাডাঙা এলাকায় বাজি বাজার বসলেও বিক্রেতারা মাছি মারছেন। অন্য দিকে, কালীগঞ্জ বা করিমপুর অঞ্চলে এ বার বাজি বিক্রির কোনও ব্যবস্থা নেই।

কল্যাণীর কাঁচরাপাড়া পঞ্চায়েতের চর-কাঁচরাপাড়া বাজারে এত দিন বাজি বিক্রি হত। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসতেন বাজি কিনতে। কিন্তু এ বার প্রশাসনের ঠিক করে দেওয়া বাজি বাজারে জনা ১৫ অস্থায়ী দোকান করে বাজি বিক্রি করছেন সপ্তাহখানেক ধরে। সকাল ৮.৩০ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকছে। তবে এ বার বিক্রি নেই। লোকালয় থেকে অনেক দূরে ফাঁকা জায়গায় বাজারের কথা অনেকেই জানতে পারছেন না। জানলেও অত দূর যেতে রাজি নন কেউ। বাজি বিক্রির লাইসেন্স নেই এমন খুচরো দোকানদারদের এ বার বাজি বিক্রয় নিষিদ্ধ।

Advertisement

রানাঘাট শহরজুড়ে অমিল বাজি। গ্রামীণ এলাকায় দুই একটি দোকানে আতসবাজি ও সবুজবাজি মিললেও চাহিদা নেই। ব্যবসায়ীদের দাবি, এ বছর দুর্গাপুজো ও দীপাবলির আগে বাজি নিয়ে অতিসক্রিয় হয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। তাই সামান্য লাভের জন্য কোনও রকম ঝামেলায় জড়াতে চাইছেন না ব্যবসায়ীরা। ধানতলার ব্যবসায়ী নরেশ মণ্ডল বলেন, “শব্দবাজি নিষিদ্ধ। আতশবাজি এবং সবুজবাজির দাম এতই বেশি যে, ক্রেতাদের আগ্রহ নেই। বাজির ব্যবসা এ বছর পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছি।”

গাংনাপুরের বাজি উৎপাদন বন্ধ হয়েছে বছরপাঁচেক হল। কিছু দিন হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে আতসবাজি বাজি কিনে ব্যবসা চলছিল। কিন্তু পরিবেশ বান্ধব সবুজবাজি বিক্রির নির্দেশ আসার পরই কার্যত বাজির কারবার শেষ হয়ে যায়। গাংনাপুরে বাজি-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় মানুষের কথা ভেবে দেবগ্রামের বাঘাডাঙায় বাজি বাজার তৈরি করে দেওয়া হলেও ক্রেতারা সেখানে যেতে চাইছেন না।

উত্তরে করিমপুর, তেহট্ট বা কালীগঞ্জে বাজির বাজার না থাকায় বাজি কেনাবেচা নিয়ে আগ্রহ কমছে ক্রেতাদের। তাঁরা সাফ জানাচ্ছেন দু-তিনশো টাকার বাজি কেনার জন্য কেউ এলাকার খোলাবাজার ছেড়ে দূরের বাজি বাজারে যাবেন। ফলে, দীপাবলি এবং কালীপুজোয় বাজি ব্যবসা আরও খারাপ হবে বলেই মনে করেন ব্যবসায়ীরা। যেমন, কালীগঞ্জের মানুষকে বাজি কিনতে হলে নবদ্বীপের বাজি বাজারে আসতে হবে। ক্রেতাদের মতে, এ সব অবাস্তব পরিকল্পনা। এমনিতে কালীগঞ্জের বাজির জোগান আসে লাগোয়া মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার শক্তিপুর থেকে। পলাশির তেজনগর ঘাট পার হয়ে শক্তিপুর থেকে বাজি এ বার কালীগঞ্জে আসবে কিনা, সময় বলবে। করিমপুর বাজারের বাজি বিক্রেতা বিনয়কৃষ্ণ দত্ত, অরুণ রায় প্রমুখ জানান, গত বছর বিধিনিষেধ মেনে বাজি বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এবারেও তাঁরা অনুমতির আশায় যথাস্থানে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সাড়া পাননি। তাই এ বার বাজি বিক্রি বন্ধ।

সবুজবাজি এবং বাজি বাজারের জোড়া ফলায় বিদ্ধ বাজি ব্যবসা। হাল-হকিকত দেখে অনেকেই মনে করছেন, এবারে হয়তো দীপাবলি শব্দহীন হতে চলেছে নদিয়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন