বল জালে জড়াতেই উড়ান শুরু ওদের

তার উপরে একের পর এক ঝাপিয়ে পড়ল টিমের অন্যান্য খেলোয়াড়রা। সাইড লাইনের বাইরেও তখন উল্লাস। সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠেন সংশোধনাগারের নিরাপত্তারক্ষীরা। আবাসিকরা যাতে নিজেদের মধ্যে কোনও গন্ডগোল বাঁধিয়ে না ফেলে সেই জন্য সতর্ক চোখ ঘোরাপেরা করতে থাকে মাঠময়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৭
Share:

প্রাপ্তি: পুরষ্কার পেল জয়ীরা। নিজস্ব চিত্র

বলটা জালে জড়াতেই দু’হাত ডানার মত ছড়িয়ে উড়ান শুরু হল গনেশ দাসের। কিন্তু, সে দৌড় বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না।

Advertisement

তার উপরে একের পর এক ঝাপিয়ে পড়ল টিমের অন্যান্য খেলোয়াড়রা। সাইড লাইনের বাইরেও তখন উল্লাস। সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠেন সংশোধনাগারের নিরাপত্তারক্ষীরা। আবাসিকরা যাতে নিজেদের মধ্যে কোনও গন্ডগোল বাঁধিয়ে না ফেলে সেই জন্য সতর্ক চোখ ঘোরাপেরা করতে থাকে মাঠময়।

না, তেমন কিছু হয়নি।শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় কৃষ্ণনগর সংশোধনাগারের ফুটবল টুর্নামেন্ট।

Advertisement

তবে সে সবের দিকে কোন খেয়ালই রাখতে চায় না আবাসিকেরাও। তারা বরং গনেশকে নিয়ে উচ্ছাসে মেতে ওঠে। হবে নাই বা কেন? সোম বারের ফাইনাল খেলায় সেই একমাত্র গোলদাতা। তার করা গোলেই ওল্ড বিল্ডিং ৪ নম্বর ওয়ার্ড ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে হাজত বিল্ডিং ৫ নম্বর ওয়ার্ডকে। শুধু তাই নয়, ম্যান অব দ্য সিরিজ ও টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কারটাও জিতে নিয়েছে সে।

পুজোর দিনগুলোতে তারা আর কিছু পাক বা না পাক, এই ফুটবল টুর্নামেন্টটাই তাদের কাছে মুক্তির আনন্দ। গত চার বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে কৃষ্ণনগর সংশোধনাগারের ভিতরে দুর্গা পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। গত চার বছর ধরে এই ফুটবল টুর্নামেন্টকে ঘিরে আবাসিকদের উন্মাদনা যেন বাঁধনহারা। এই বছর ১৬টি ওয়ার্ড থেকে সাত জনের একটি করে দল তৈরি করা হয়েছিল। খেলছে পাঁচজন করে। টিম তৈরি করেছে সেই ওয়ার্ডের আবাসিকরাই।

১১২ জন আবাসিক খেলায় অংশ নিয়েছিলে। যাদের কারও কারও খেলা দেখে রীতিমতো মুগ্ধ হয়েছেন অতিথিরা। ফাইলানে জিততে না পারলেও ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছেন হাজত বিল্ডিং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উজ্জ্বল বাগচী। খেলা দেখে কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলছেন, “আবারও প্রমাণিত হয়ে গেল যে, সংশোধনাগারের আবাসিকদের মধ্যে কত রকম প্রতিভা লুকিয়ে থাকে।’’

টুর্নামেন্টের আয়োজক রামকৃষ্ণ মিশনের স্থানীয় শাখা। রামকৃষ্ণ মিশনের অছি পরিষদের অন্যতম সদস্য দিব্যানন্দ মহারাজ বলেন, “আমরা চাই আবাসিকরা নিজেদের সংশোধণ করে সমাজের মূল স্রোত ফিরে আসুন। তাই তাদের মন থকে হতাশা দূর করতে খেলাধুলোর মাধ্যমে বৈচিত্র আনতে চেয়েছি। তৈরি করতে চেয়েছি ‘টিম স্পিরিট।’’ এ দিন উজ্জ্বল বিশ্বাস আবাসিকদের তৈরি করা ৫২টি জামা দিব্যানন্দ মহারাজের হাতে তুলে দেন। সেই জামা বিলি করা হবে দরিদ্রদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন