জেএনএম হাসপাতালে জখম চালক সমীরণ গোলদার। —নিজস্ব চিত্র
লরির সঙ্গে গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হল চার জনের। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হরিণঘাটার জাগুলিতে ওই দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিন জনের। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে মৃত্যু হয় আরও এক জনের। গাড়ির চালক-সহ ওই ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও দু’জন। তাঁরা কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। মৃত এবং জখমদের বাড়ি বনগাঁ এলাকায়।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন রাজেন্দ্র ঢালি (৩৬), মিলনকুমার পাল (৩৪), জগবন্ধু ঘোষ (৪২) এবং কৃশানু মণ্ডল (২৪)। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সমীরণ গোলদার ও অচিন্ত্য দাস। সমীরণবাবুই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। দু’জনেরই আঘাত গুরুতর। দুর্ঘটনার পরে গাড়িটি দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশ চালক-সহ লরিটির কোনও সন্ধান পায়নি।
হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে সমীরণবাবু জানান, রাজেন্দ্র ঢালি ও জগবন্ধু ঘোষ পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। গাড়িটি সমীরণবাবুর এক আত্মীয়ের। ব্যাবসার কাজে তাঁরা নৈহাটি এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁরা বনগাঁ থেকে বের হন। কাজ শেষ করে তাঁরা একটি হোটেলে বসে খাওয়া দাওয়া করেন।
সমীরণবাবু জানান, রাত পৌনে একটা নাগাদ তাঁরা হোটেল থেকে বের হন। কাঁচরাপাড়া কাঁপা মোড়ে ব্যারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ছেড়ে তাঁরা জাগুলি-কাঁপা রোড ধরেন। সেই রাস্তায় কিছুদূর এগিয়েই ঘটে দুর্ঘটনা। সমীরণবাবু বলেন, ‘‘আমি রাস্তার বাঁ দিক দিয়েই গাড়ি চালাচ্ছিলাম। আচমকাই একটি দশ চাকার লরি আমাদের গাড়ির সামনে এসে পড়ে। আমি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি। আমাদের গাড়ির সঙ্গে লরির মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।’’
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন যুবক অবশ্য পুলিশকে অন্য কথা জানিয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, গাড়িটি তীব্র গতিতে জাগুলির দিকে যাচ্ছিল। সামনের একটি লরিকে পাশ কাটিয়ে বেরোতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তখনই উল্টো দিক থেকে আসা একটি লরির সামনে পড়ে গিয়ে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে।
ঘটনাস্থলেই রাজেন্দ্র ঢালি, মিলন কুমার পাল এবং জগবন্ধু ঘোষের মৃত্যু হয়। বাকিদের প্রথমে হরিণঘাটা গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে আনা হয়। সেখানেই কৃশানু মণ্ডলের মৃত্যু হয়।
ভোর রাতের দিকে বনগাঁয় এই দুর্ঘটনার খবর পৌঁছয়। তাঁদের বাড়ির লোকেরা সকালে কল্যাণী পৌঁছন। দুপুরে ময়নাতদন্তের পরে দেহগুলি নিয়ে তাঁরা বনগাঁ যান। এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অচিন্ত্যবাবু এবং সমীরনবাবু জানতেন না যে, দুর্ঘটনায় তাঁদের বাকি সঙ্গীদের মৃত্যু হয়েছে।