এই গাড়িতে করেই গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
দোকানে কেনাকাটা করলেন প্রাণভরে। তারপরেই চিন্তা, এতগুলো ব্যাগ নিয়ে ভিড় বাসে-অটোতে বাড়ি ফিরবেন কী করে?
চিন্তা নেই, দোকানের ‘ম্যাজিক’ গাড়ি, কিংবা টোটো, তৈরি আছে দরজার কাছেই। বাড়ি পৌঁছে দেবে মালপত্র-সহ ক্রেতাদের। একেবারে নিখরচায়। এই অভিনব ‘ফ্রি গিফট’ চালু করার দৌলতে বহরমপুরের খাগড়া এলাকার একটি কাপড়ের দোকানে ভিড় উপচে পড়ছে। ম্যাজিক, টোটো মিলিয়ে তিনটি গাড়ি দিনভর ক্রেতা নিয়ে শহরের অলিগলিতে চরকিপাক দিচ্ছে। মাথায় দোকানের নাম লেখা বোর্ড, তাই বিজ্ঞাপনও হয়ে যাচ্ছে। খদ্দের ধরার এই অভিনব পন্থার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন অন্য ব্যবসায়ীরা।
ইদের বাজার ধরতে বহরমপুর আয়োজনে কোথাও খামতি রাখেনি। কোনও দোকানের সামনে চার্লি চ্যাপলিন— কচিকাঁচাদের আবদারে সেখানে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন বাবা-মায়েরাও। কোথাও সাইকেল, মোটরবাইক, গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপ্যায়ণের সাবেকি প্রথায় ঠান্ডা পানীয় বা জল তো আছেই। তা ছাড়া লাকি ড্র, ডিসকাউন্ট কুপন, গিফট ভাউচার, দশ হাজার টাকার উপরে কেনাকাটায় ফ্রি ট্রলি ব্যাগ, সবই আছে। কিন্তু ফ্রি-তে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ‘অফার’ এই প্রথম।
কী করে এটা সম্ভব হল?
ওই কাপড়ের দোকানের কর্ণধার শেখর মারুতি জানান, যাঁরা নিজেরা গাড়ি নিয়ে আসেন তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু দূরদুরান্ত থেকে যাঁরা গাড়ি না নিয়ে আসেন, কেনাকাটার পরে তাঁদের সব থেকে বড় চিন্তা থাকে বাড়ি ফেরার। সেটা মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা। কী ভাবে এই কৌশল মাথায় এল তা-ও জানালেন তিনি। শেখরবাবু বলেন, ‘‘আমাদের তিনটি গাড়ি আছে। সেই গাড়িগুলিই দোকানের কাজে লাগানো হয়েছে।’’ এমন সিদ্ধান্তের পরে হাতেনাতে তার ফলও মিলেছে বলে তিনি মানছেন। তাঁর কথায়, বহরমপুর শহরের সর্বত্র এই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। আর যাঁরা বহরমপুরের বাইরে থেকে আসছেন তাঁদের স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। দোকান যতক্ষণ খোলা থাকছে, ততক্ষণই এই সুবিধা মিলছে।
বৃহস্পতিবার বহরমপুরে ইদের বাজার করতে এসেছিলেন লালগোলার বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী সাবিনা বিবি। কাশিমবাজার স্টেশনে নেমে তাঁরা একটি টোটোতে এসেছিলেন ওই দোকানে। কেনাকাটার পর্ব শেষ হতেই দোকানের এক প্রবীণ কর্মচারী জানতে চাইলেন, ‘‘আপনারা কি গাড়িতে এসেছেন?’’ উত্তরটা জানার পরেই ওই কর্মচারী তাঁদের বললেন, ‘‘বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করুন। আমাদের গাড়ি আপনাদের স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। গাড়িতে মালপত্রও তুলে দেবে আমাদেরই লোক।’’
ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়ে রফিকুলের। তাঁর কথায়, ‘‘বাজার করার পরে জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি ফেরাটা খুবই ঝামেলার। এই সুবিধাটা বিরাট পাওনা।’’
কী বলছেন অন্য দোকানদারেরা? তাঁদের অনেকেই এই ব্যবস্থাকে অভিনব বলে মনে করছেন। মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্সের সংগঠন সম্পাদক প্রদ্যোৎ দে। তাঁর কথায়, ‘‘ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করে ক্রেতা টানার বিষয়টি প্রশংসনীয়ও বটে।’’ ওই দোকানের এক কর্মীর কথায়, ‘‘দাদা তো প্রায়ই এমন চমক দিতে পছন্দ করেন।’’ তা শুনে পাশ থেকে আর হাসতে হাসতে একজন বললেন, ‘‘তবে যাই বলুন দাদা, ম্যাজিকে কিন্তু লোক ভালই টানছে।’’