কার্টুন থেকে ডেঙ্গির মশা, ঝলমলে ঘট ভাসান

শুধু ভূতই বা কেন, সোমবার কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রীর ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রায় এমন মজাদার চরিত্রের কোনও অভাব ছিল না। তবে সব বিষয়ই যে, মজার তেমন নয়। কোনও কোনও বিষয় গভীরভাবে ভাবায়ও। 

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:৩০
Share:

ট্যাবলো: শহরে ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

ভর দুপুরেই ভূত! তাও আবার যে সে ভূত নয়, একেবারে শাঁকচুন্নি। সেগুলো যেন ঘাড়ের উপরে এসে পড়ছিল। তাই না দেখে বাবার গলাটা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিল বছর চারেকের ছোট্ট অঙ্কিতা। ভয় পাবেই না বা কেন? সে তো আর বোঝে না যে, সেগুলো আসল ভূত নয়। নেহাতই ট্যাবলোর চরিত্র।

Advertisement

শুধু ভূতই বা কেন, সোমবার কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রীর ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রায় এমন মজাদার চরিত্রের কোনও অভাব ছিল না। তবে সব বিষয়ই যে, মজার তেমন নয়। কোনও কোনও বিষয় গভীরভাবে ভাবায়ও।

তবে অঙ্কিতার মতো যারা ভূত দেখে কান্নাকাটি শুরু করেছিল, পরমুহূর্তেই তাদের সামনে এসে হাজি লম্বা পা ওয়ালা একদল মানুষ। ভিড় রাস্তা দিয়ে তারা তরতর করে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের দেখে কান্না ভুলে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বাবাকে শুধোয়, “এত্ত লম্বা মানুষ! কোথায় থাকে এরা?” বাবা বলেন, “না রে, ওগুলো রণপা, বাঁশের।” তাতে যেন আরও অবাক হয় ছোট্ট মেয়েটি। ফের প্রশ্ন “ওদের পা আমাদের মতো নয় কেন?”

Advertisement

কৃষ্ণনগরের রাজপথ ধরে এগিয়ে যেতে থেকে একের পর এক ঘট বিসর্জনের ট্যাবলো। কোনওটায় দেশপ্রেম তো কোনওটায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান তো অন্যটায় আবার বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়ার ডাক।

গত বছর জগদ্ধাত্রী পুজোর আগের দিন নোট বাতিলের ঘোষণা হয়েছিল। সেই দুর্ভোগ যে ভুলে যায়নি কৃষ্ণনগর, তা এ দিন ট্যাবলোর মাধ্যমে দেখানো হল। দার্জিলিংয়ে নিহত পুলিশকর্মী অমিতাভ মালিকের বিষয়ও ঠাঁই পেয়েছে এদিনের ট্যাবলোয়। বাদ ছিল না রাজনীতিও। কোনওটি নিছকই আনন্দের তো কোনওটি মন ভার করার। সব মিলিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর বারোয়ারিগুলির ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রা হয়ে ওঠে বর্ণময়।

কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস প্রাচীন হলেও ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রার বয়স নেহাতই কম। একদিনের পুজোকো আরও বর্ণময় করে তুলতেই এমন পরিকল্পনা। মঙ্গলঘট কে বর্ণাঢ়্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে রাজবাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হয় জলঙ্গী নদীর বিসর্জন ঘাটে। আর এই শোভাযাত্রা দেখার জন্য রাস্তার দুপাশে ভিড় করে থাকে হাজার হাজার মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিড় ঠেলে একে একে কাঠালপোঁতা, জজকোর্টপাড়া, নেদেরপাড়া, মালোপাড়া, চৌধুরীপাড়া, উকিলপাড়া, হাতারপাড়া, এমজি রোড, গোলাপট্টি, রাধানগর নতুন বারোয়ারির মত পুরনো বারোয়ারিগুলি।

বিষয় ভাবনা আর নিত্যনতুন আঙ্গিকে তারা বিভিন্ন ট্যাবলোর মাধ্যমে এই শোভাযাত্রাকে নিয়ে যায় এক অন্যমাত্রায়। যার প্রতিটা পরতে ফুটে ওঠে সমাজ, দেশ আর বর্তমান সময়ের নানা ঘটনা।

অন্ধকার নামতে আবারও রাস্তার দু’পাশে ভিড় জমতে থাকে। নিয়ন আলোয় ভাসা বেয়ারাদের কাঁধে সাঙে চড়ে সুবিশাল প্রতিমা ভিড় ঠেলে এগিয়ে চলে বিসর্জন ঘাটের দিকে। নিরঞ্জনের অপেক্ষায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন