খলিলুরের কিস্তিমাত

ধনী ব্যবসায়ী খলিলুরের জঙ্গিপুরে সে ভাবে কোনও পরিচিতি ছিল না।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০২:৪২
Share:

খলিলুর রহমান। নিজস্ব চিত্র

সালটা ২০১৬। স্থানীয় তৃণমূলের লোকজন তাঁর বাড়িতে ধর্না দেন। আবদার একটাই— ‘আপনাকে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হতে হবে।’ কিন্তু কোনও ভাবেই রাজি করানো যায়নি ধুলিয়ানের বিড়ি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানকে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফরাক্কার দলীয় মঞ্চে সেই খলিলুরের হাতেই তৃণমূলের পতাকা ধরিয়ে চমকে দিয়েছিলেন দলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। সেই মঞ্চ থেকেই শুভেন্দু ঘোষণা করেন, লোকসভা নির্বাচনে মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে খলিলুর রহমানকে প্রার্থী করা হবে। সেই শুরু খলিলুরের রাজনৈতিক যাত্রা।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনে দলীয় কোন্দলে জঙ্গিপুরের প্রার্থী বাছাইয়ে সমস্যায় পড়ে তৃণমূল। আর সেই সমস্যা সামাল দিতেই জঙ্গিপুরে প্রার্থী করা হয় খলিলুরকে। ধনী ব্যবসায়ী খলিলুরের জঙ্গিপুরে সে ভাবে কোনও পরিচিতি ছিল না। দলের মধ্যেও তখন এ নিয়ে কথা উঠেছিল। কিন্তু স্বচ্ছ ভাবমূর্তি থাকায় জঙ্গিপুরে মনোনয়ন পেতে বেগ পেতে হয়নি।

প্রচারের শুরুতেই দলের সমস্ত জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে তিন গোষ্ঠীর তিন নেতাকে জঙ্গিপুরের দায়িত্ব দিয়ে কমিটি গড়ে কর্মিসভায় প্রচ্ছন্ন ‘হুমকি’র সুরে বলা হয়, বুথ পিছু দু’শো ভোটের লিড না হলে পদ থেকে ছাঁটাই। আর পদ হারানোর ভয়ে দ্বন্দ্ব ভুলে ছোট-বড় সব নেতাকেই পথে নামতে হয়েছে খলিলুরের প্রচারে। প্রবীণ নেতা মহম্মদ সোহরাবকেও ছুটতে হয়েছে খড়গ্রাম থেকে নবগ্রাম।

Advertisement

শারীরিক নানা অসুবিধা সত্ত্বেও খলিলুরও চষে বেড়িয়েছেন সাতটি বিধানসভা ক্ষেত্রের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। রাজ্যের মধ্যে ধনী প্রার্থীদের অন্যতম হওয়ায় প্রচারে অর্থাভাব কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাঁর। এমনকি প্রতি এলাকায় নেতাদের উপর তাঁর আলাদা নজরদারি ছিল এমনটাই যে, খোদ দলনেত্রী জঙ্গিপুরে এসে সতর্ক করেন দলের এক মন্ত্রীকে।

জয় নিয়ে খলিলুর নিজেও ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু জয়ের ব্যবধান যে এত বাড়বে কিংবা লড়াই হবে বিজেপির সঙ্গে তা কেউ ভাবতে পারেননি। সাধারণ ভাবে লালগোলা, সাগরদিঘিকে ধরা হয় কংগ্রেসের গড় হিসেবে। কিন্তু কংগ্রেস গড়েও থাবা বসিয়ে ৫.৬২ লক্ষ ভোট পেয়েছেন খলিলুর। জঙ্গিপুরে সেই অর্থে তৃণমূলের নিজস্ব কোনও ভোট ব্যাঙ্ক নেই। অন্য দল থেকে আসা নেতাদের ভিড় যেমন যেমন বেড়েছে, তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কও বেড়েছে সে ভাবেই। কিন্তু তাই বলে ৫.৬২ লক্ষ?

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ভোটের বিরাট অংশই কংগ্রেস ও সিপিএমের সংখ্যালঘু ভোট। ভোটের প্রচারে বার বার খোদ তৃণমূলনেত্রী অভিযোগ তুলেছেন, আরএসএসের সঙ্গে কংগ্রেস প্রার্থীর যোগ। এই কথা দলের নেতাদের মাধ্যমে ছড়িয়েছে গ্রামে গ্রামে। আর তার ফলে সংখ্যালঘু ভোটের ৭৫ শতাংশেরও বেশি ঢলে পড়েছে তৃণমূল প্রার্থীর ঝুলিতে। আর সেখানেই কিস্তিমাত খলিলুরের। তিনি বলছেন, “এই জয় ভোটের মেরুকরণের জয়। কর্মীরাও খেটেছেন অক্লান্ত। আর এ সবেরই মিলিত ফসল ঘরে তুলেছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন