করিমপুরে ছাত্রীকে গুলি

বিদিশা বলেন ‘ভালবাসিনি’, দাবি চালকের

গুলিবিদ্ধ বিদিশাকে যখন করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে কৃষ্ণনগরে পাঠানোর জন্য অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হচ্ছে, বাড়ির কেউ তখনও এসে পৌঁছননি। 

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১৮
Share:

বিদিশা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

গুলিবিদ্ধ বিদিশাকে যখন করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে কৃষ্ণনগরে পাঠানোর জন্য অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হচ্ছে, বাড়ির কেউ তখনও এসে পৌঁছননি।

Advertisement

হাতে অপেক্ষা করার সময় নেই। কে যাবে সঙ্গে? হাসপাতালের নিশ্চয় যানের চালক, মধ্য-চল্লিশের মিঠু অধিকারী উঠে পড়েন অ্যাম্বুল্যান্সে। তিনি জানান, শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে কষ্ট করে কিছু কথা বলেছিলেন বিদিশা। তার পর অ্যাম্বুল্যান্সেই রক্তবমি করে তিনি নেতিয়ে পড়েন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিকারপুরের কুঠিপাড়ার বাড়ি থেকে স্কুটি নিয়ে নিউ শিকারপুরের দিকে গিয়েছিলেন করিমপুর পান্নাদেবী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী বিদিশা মণ্ডল। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে মুর্শিদাবাদের সাগরপাড়া থেকে এসেছিলেন অলীক কর্মকার নামে বছর পঁচিশের এক যুবক। তিনি বিদিশার জামাইবাবুর বন্ধু, সেই সূত্রে পরিচয়। সামান্য কথাবার্তার পরেই অলীক পিস্তল দিয়ে বিদিশার মুখে গুলি করেন বলে অভিযোগ। তার পর পিস্তলের বাট নিজের মাথায় ঠুকে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। রাতে শক্তিনগর হাসপাতালে বিদিশা মারা যান। গুরুতর জখম অলীক সেখানেই ভর্তি আছেন।

Advertisement

মিঠুর দাবি: অ্যাম্বুল্যান্সে বিদিশা তাঁকে বলেন— “আমি অলীককে কখনও ভালবাসিনি। গত জানুয়ারিতে আমার দিদির বিয়ে হয় সাগরপাড়ায়। জামাইবাবুর বন্ধু হিসেবেই আমি ওকে চিনতাম। দু’-এক বার জামাইবাবুর সঙ্গে আমাদের বাড়িতেও এসেছে। এর পর বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করত। আমি ওকে আমার থেকে দূরে থাকতে অনুরোধ করেছিলাম।’’

তার পরেও কেন এই ঘটনা?

মিঠুর দাবি: অ্যাম্বুল্যান্সে বিদিশা তাঁকে বলেছিলেন— ‘‘বৃহস্পতিবার সকালে ও আমায় ফোন করে বলে, তোমার সমস্যা থাকতে পারে, আমি সেটাই মেনে নেব। তবে পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও তোমার সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে চাই। তার পরে তোমাকে আর কোনও দিন বিরক্ত করব না। আমি রাজি হই। ও মোটরবাইক নিয়ে এসেছিল। আমি দেখা করতে যেতেই ও আমায় স্কুটি রেখে ওর বাইকে সাগরপাড়ায় যেতে বলে। তখনই বিয়ে করতে চায়। আমি আপত্তি করতেই পকেট থেকে পিস্তল বের করে আমার মুখে গুলি করে। আমি পালানোর চেষ্টা করতেই আর একটা গুলি। আর কিছু আমার মনে নেই।”

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে বিদিশার স্কুটি এবং একটি সেভেন এমএম পিস্তল মিলেছে। জ্ঞান হারিয়ে বিদিশা রাস্তায় পড়ে ছিলেন। পাশেই পড়ে ছিলেন অলীকও। দু’জনকেই তুলে করিমপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে শক্তিনগর।

মিঠুর দাবি: অ্যাম্বুল্যান্সে বিদিশা বলেন— ‘‘কাকু আমায় বাঁচান। যা খরচ হবে আমার বাবা দেবেন। ওই ছেলেটা আমায় ভালবাসলেও আমি কখনও ওকে ভালবাসিনি। আমি অন্য এক জনকে ভালোবাসি। ওকেই বিয়ে করতে চাই!”

মিঠু বলেন, “অ্যাম্বুল্যান্সে বিদিশা কাঁদতে কাঁদতে অনেক কথা বলছিল। বারবার বাঁচানোর আর্তি জানাচ্ছিল। আমি যতটা সম্ভব ওকে সাহস জুগিয়ে যেতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু শক্তিনগরে নিযে গিয়েও শেষরক্ষা হল না। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ অপারেশন থিয়েটারেই ওর মৃত্যু হল।”

বিদিশার বাবা বুদ্ধদেব মণ্ডল ইতিমধ্যে অলীকের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। শুক্রবার কুঠিপাড়ার বাড়িতে বসে কাঁদতে-কাঁদতে মা মাধবী বলেন, ‘‘পুজোর আগেই পাঁচটা জামা হাতে পেয়ে দারুণ খুশি ছিল মেয়ে। দর্জির কাছে সেগুলো ফিটিং করাতে দিয়েছে। কিন্তু পুজো আর ওর দেখা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন