ফুটবলে মাতল সুতি। নিজস্ব চিত্র
ওরা এতদিন লড়েছে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে। সুতি ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় গত দু’বছরে প্রায় দু’শো মত নাবালিকা বিয়ে তারা রুখে দিয়েছে। বুধবার শিশু দিবসে সেই সব বিয়ে বন্ধ হওয়া কিশোরী স্কুল পড়ুয়াদের নিয়েই ফুটবলে মাতল সুতি’র কন্যাশ্রী যোদ্ধারা।
স্বেচ্ছাসেবী একটি সংস্থা এবং গ্রামপঞ্চায়েত যৌথ ভাবে সুতি’র ছাবঘাটি মাঠে ওই ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। এ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বাল্যবিবাহের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে এমন ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত লক্ষ্মীপুর, কাশিমনগর, অরঙ্গাবাদ-১, মহেশাইল-১, জগতাই ১ এবং বাজিতপুরের বাল্যবিবাহ রুখে স্কুলমুখী কিশোরীদের সঙ্গে ওই ফুটবল প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল কন্যাশ্রী যোদ্ধারাও।
কারও পরনে শালোয়ার কামিজ, কেউ আবার স্কুলেরই পোশাকে, কালো জার্সি পরনে কেউ আবার মাঠে নেমে পড়ে। গোটা মাঠ জুড়ে ফুটবল পায়ে তাদের ‘ড্রিবল’ ও ‘ডজ্’ করা দেখে মাঠে হাজির ফুটবলপ্রেমী দর্শকদের ফিসফাস করতে শোনা যায়—রীতিমত প্রস্তুতি নিয়েই তারা মাঠে নেমেছে, খেলা দেখেই মালুম হচ্ছে।
সুতির মাঠে কিশোরীদের এমন ছন্দময় ফুটবল দেখবেন ভাবতেই পারেননি সুতির ওসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ, যিনি সুতিকে এই নিয়ে দেখছেন কম-বেশি আট বছর। এ দিন মাঠে হাজির থেকে দু’হাতে তালি দিয়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন মহিলা ফুটবলারদের।
সবকে হারিয়ে অবশ্য শেষ হাসি হাসল বাজিতপুরের কিশোরীরাই, বাল্য বিবাহে যাদের নাম প্রথম সারিতে এখনও। পড়ন্ত বেলায় ২-০ গোলে অরঙ্গাবাদ ১ পঞ্চায়েতকে হারিয়ে জয় করে নিল শিশু দিবসের ফুটবল কাপ। আর এই দুটি গোল দিয়েই খেলার সেরা হল বাজিতপুরের নবম শ্রেণির পড়ুয়া কন্যাশ্রী সাবানা খাতুন। সাবানার দাবি, গত আট মাসে ১৬ টি বাল্য বিবাহ বন্ধ করে সাফল্য পেয়েছি আমরা বাজিতপুরে। ফুটবলের এই সাফল্যকে ছড়িয়ে দিয়ে আগামীতে সরকারের ঘোষিত “চাইল্ড ম্যারেজ ফ্রি” গ্রাম পঞ্চায়েত হিসেবেও দাঁড় করাতে পারব।
বাজিতপুরের কিশোরী সাহানারা খাতুন, দু’বছর আগে যার বিয়ে বন্ধ করতে গিয়েছিল কন্যাশ্রী যোদ্ধা ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা। সাহানারা গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। এ দিনের খেলায় অংশ নিতে পেরে উৎসাহিত সাহানারা বলছেন, “এ ভাবে এক সঙ্গে ফুটবল খেলব ভাবতেই পারিনি।” উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া অরঙ্গাবাদের নাজেমা খাতুন বলছেন, “পিছিয়ে পড়া এলাকা এই বিড়ি শিল্পাঞ্চল। শিক্ষার অভাব থেকে সচেতনতার এই সঙ্কট । আমার বাড়িতে বিয়ের চেষ্টা হয়েছিল একদিন। তা বন্ধ না হলে আজ এই জায়গায় আসতেই পারতাম না। এখন এই সচেতনতা ফেরাতেই লড়াই শুরু হয়েছে আমাদের।”