লক্ষ্মীলাভ: ফরাক্কার কেন্দুয়ায়। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
একটা সময় কত কথাই না শুনতে হয়েছে তাঁদের।
কেউ বলেছেন, ‘ওই দেখো, ছাগল গাঁয়ের লোক যাচ্ছে!’
কারও কটাক্ষ, ‘তোমরা নাকি ছাগলেরও নাম রাখ!’
কেউ আবার বাঁকা হেসেছেন, ‘মানুষ খেতে পায় না। এ দিকে আবার ছাগলের জন্য চিন্তা কত!’
সে সব টিপ্পনি মুখ বুঁজে সয়ে গিয়েছে কেন্দুয়া। আর এখন?
ঠাট্টা-মসকরা-কটাক্ষ ভুলে সেই নিন্দুকেরাই বলছেন, ‘বাপ রে বাপ, তোমাদের এলেম আছে! ছাগল পুষেই এত কিছু করে ফেললে! কী করে ছাগলের যত্ন-আত্তি করতে হয়, আমাদের শেখাবে?’
কথাটা কথার কথা নয়। গত কয়েক বছরে ঘরে ঘরে ছাগল পুষে গ্রামের চেহারাটাই বদলে দিয়েছেন ছায়া মণ্ডল, সালমা বেওয়া, বিলকিস বিবিরা। গ্রামের ২৪১টি পরিবারে প্রায় ৯১১টি ছাগল রয়েছে। সেই ছাগলকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখে ফরাক্কার প্রত্যন্ত গ্রাম, কেন্দুয়া।
সালমা বলছেন, ‘অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোত। এখন আর সে সব চিন্তা নেই। ছেলেমেয়েরা ইস্কুলে যায়। পড়ার খরচ, পরবের জামাকাপড় সবই হয় ছাগল বিক্রির টাকায়।’’
ছায়া মণ্ডলের পরিবারে পাঁচ জন সদস্য। স্বামী দিনমজুর। ছায়া বিড়ি বাঁধেন। পাশাপাশি তিনি বাড়িতে তিনটি ছাগল পুষছেন। ছায়া বলছেন, “বাড়ির দুয়ারেই সবুজ ঘাস। দিনভর সেখানেই চরে। আগে ছাগল পোষার পদ্ধতি জানতাম না। তখন নিজেদের ভুলে দু’টো ছাগল মারা গিয়েছে। পরে চোদ্দো হাজার টাকায় দু’টো ছাগল বিক্রি করেছি।”
এখন ওই গ্রামের প্রায় সকলেই নিজেদের পেশার পাশাপাশি ছাগল পালন করেন। আর সেই দায়িত্বটা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন মহিলারাই। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড লাগোয়া কেন্দুয়ায় স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গ্রামের মহিলাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন।
বিজ্ঞান সম্মত ভাবে কী ভাবে ছাগল প্রতিপালন করা যায়, কী ভাবে ছাগলের অকালমৃত্যু রুখে দেওয়া যায়, প্রাথমিক চিকিৎসাই বা কী ভাবে করা যায় সেই বিষয়ে টানা দু’দিন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ওই সংস্থার সদস্যেরা।
সংস্থার প্রকল্প আধিকারিক শুকদেব ঘোষ জানান, ছাগল পুষে গ্রামের হতশ্রী চেহারা এখন অনেক বদলে গিয়েছে। এই প্রশিক্ষণের ফলে গ্রামের মানুষ আরও উপকৃত হবেন। ছাগলের অকালমৃত্যুও রুখে দেওয়া যাবে।
রাজ্য প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের সহকারি অধিকর্তা সারিকুল ইসলাম জানান, ছাগল প্রতিপালন করা নিঃসন্দেহে লাভজনক ব্যাপার। ওই গ্রামকে দেখে অন্যেরা শিক্ষা নিতে পারে। তবে ভাইরাসঘটিত রোগ পিপিআর, নিউমোনিয়া, কৃমি ও পক্সে অনেক সময় ছাগল মারা যায়। সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা ও প্রাণিচিকিৎসা কেন্দ্রে যোগাযোগ করা জরুরি। কেন্দুয়া বলছে, সে আর বলতে?