খুপরি ঘর, পড়েই আছে কল্যাণীয়া

সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায্য দরে ফ্ল্যাট পায় তার জন্য ব্যারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ঘেঁষা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ‘কল্যাণীয়া আবাসন প্রকল্প’ গড়ে তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ আবাসন পর্ষদ।

Advertisement

মনিরুল শেখ

কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮ ০৭:৪০
Share:

কল্যাণীয়া আবাসন প্রকল্প

দিন-দিন বেড়েই চলেছে শহরের জনসংখ্যা। ফ্ল্যাটের চাহিদা তুঙ্গে। কিন্তু কল্যাণীতে সরকারি ফ্ল্যাটের বিক্রি নেই ।

Advertisement

সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায্য দরে ফ্ল্যাট পায় তার জন্য ব্যারাকপুর-কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ঘেঁষা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ‘কল্যাণীয়া আবাসন প্রকল্প’ গড়ে তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ আবাসন পর্ষদ। ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর পর্ষদের সভাপতি অরূপ বিশ্বাস সেটির উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে মাত্র গোটা তিনেক ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সেগুলিও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। যাঁরা কিনেছিল, সেই তিনটি পরিবারও সেখানে থাকে না।

কেন এই অবস্থা ?

Advertisement

যাঁরা সেখানে ফ্ল্যাট কেনার জন্য খোঁজখবর করেছিলেন, তাঁরা বলছেন— একে তো আবাসনটি মূল শহর থেকে দূরে। কোনও বাস বা অটো স্টপ নেই। টোটো যায় কালেভদ্রে। নিজের গাড়ি না থাকলে শহরে যাতায়াত সমস্যার। তার উপরে শোওয়ার ঘর খুবই ছোট, ১০০ বর্গফুটও নয়। খাট-আলমারি রাখলে আর চলাফেরার জায়গা থাকছে না। কল্যাণীর পুরপ্রধান সুশীলকুমার তালুকদার জানান, পুরসভা ওই আবাসনে জল ও নিকাশির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কিন্তু ঘরের আয়তন ছোট হওয়ায় কেউ ফ্ল্যাট কিনছেন না।

বছর দশেক আগে থেকেই কল্যাণী শহরে এ-২ ও বি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা, মূলত সেন্ট্রাল পার্ক, পান্নালাল ইনস্টিটিউট, লেক রোড, এক ও দুই নম্বর বাজার এলাকায় একের পর এক ফ্ল্যাট উঠতে শুরু করে। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতি বছরই কয়েকশো পড়ুয়া ও গবেষক কল্যাণীতে আসেন। তাঁদের একাংশ ফ্ল্যাটও কিনতে আগ্রহী। এ ছাড়াও আশপাশের মুরাতিপুর, ঈশ্বরীপুর, মদনপুর, আলাইপুর, চাঁদামারি এলাকার সম্পন্ন লোকজনও গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কল্যাণীতে চলে আসছেন। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কল্যাণী শহরের বাইরে হলেও শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সিংহ ভাগই থাকেন কল্যাণীতে। ফলে শহরে ফ্ল্যাটের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী।

এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে কল্যাণীয়া আবাসনে তিন ধরনের ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছিল। মাসে পনেরো হাজার টাকা কম আয়ের লোকের জন্য ৪ লাখ ১০ হাজার টাকায় ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ৯ লাখ ২০ হাজার টাকায় ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আর ১৫ লাখ টাকায় ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। এই তিন রকম মিলিয়ে মোট ৬৪টি ফ্ল্যাট বানানো হয়েছে। তার পর আড়াই বছর কেটে গিয়েছে, ফ্ল্যাট বিক্রি হয়নি।

কল্যাণী শহরে গজিয়ে ওঠা বেশি দামের ফ্ল্যাট কিন্তু দিব্যি হচ্ছে। শহরের রিয়্যাল এস্টেট কারবারিরা জানাচ্ছেন, সরকার প্রতি বর্গফুটে ২৮৬০ টাকা স্ট্যাম্প ডিউটি নেয়। তা সত্ত্বেও কোনও ফ্ল্যাট তৈরি হয়ে পড়ে থাকে না। বহু সময়ে বরং তৈরির আগেই বুকিং হয়ে যায়। মাসখানেক আগেই স্কুলশিক্ষক স্বদেশ বিশ্বাস ‘বি’ ব্লকে ২১ লাখ টাকা দিয়ে একটি দু’কামরার ফ্ল্যাট কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেক কম দামে কল্যাণীয়া আবাসনে ফ্ল্যাট পাওয়া যেত। কিন্তু একে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ, তার উপরে শোওয়ার ঘর ছোট। তাই ওখানে কিনলাম না।’’

কেন তৈরি করা হল এ রকম খুপরি-খুপরি ঘর? আবাসনটির ভবিষ্যৎই বা কী?

রাজ্যের প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার সময়ে ওই প্রকল্প হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু কেন কী হয়েছিল, এখন আর মনে পড়ছে না। এখন যিনি মন্ত্রী, তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন।’’ বর্তমান আবাসন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে বারবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি, এসএমএস-এর জবাবও দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন