পঞ্চায়েতে উপ নির্বাচন

বোর্ড গড়ার পথে কাঁটা শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে উপনির্বাচন। তাই নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ জমা পড়ল নির্বাচন কমিশনে। উপনির্বাচনকে সম্মানের লড়াই হিসেবে নিয়ে কোনও পক্ষই অন্য শিবিরকে জায়গা ছাড়তে নারাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৩৪
Share:

নকল ইভিএম হাতে চলছে প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।

গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে উপনির্বাচন। তাই নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ জমা পড়ল নির্বাচন কমিশনে। উপনির্বাচনকে সম্মানের লড়াই হিসেবে নিয়ে কোনও পক্ষই অন্য শিবিরকে জায়গা ছাড়তে নারাজ।

Advertisement

৩ অক্টোবর মুর্শিদাবাদে যে ২৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতে উপনির্বাচন হচ্ছে সাগরদিঘির নওপাড়া তার একটি। বিধায়ক সুব্রত সাহার অনুগামী এবং ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের উপপ্রধান পিটার হাঁসদার শিবির পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে। বালিয়া পঞ্চায়েতের দখল নিতে মরিয়া দুই গোষ্ঠীই। বিতর্কের শুরু সেখানেই। একে অন্যের বিরুদ্ধে ভোট কেনার অভিযোগ জমা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। অভিযোগ জমা পড়েছে সহকারি রিটার্নিং অফিসার তথা বিডিও-র কাছেও।

মঙ্গলবার সাগরদিঘির নওপাড়ার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, ইটের রাস্তা তৈরির কাজ চলেছে। ভোটের আগে কারা তড়িঘড়ি রাস্তা সারাতে বলল? উত্তর এড়িয়েছেন তাঁরা। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর প্রার্থী তথা উপপ্রধান পিটার হাঁসদার অনুগামী মানু মাহারার অভিযোগ, বিধায়কের অনুগতরা গ্রামে রাস্তা তৈরি করছেন। নলকূপ বসাচ্ছেন। ত্রিপল বিলির কথাও ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিডিওকে এ সব জানিয়েও ফল হয়নি। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি।’’ বিডিও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সাগরদিঘির বিধায়ক সুব্রত সাহা ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএস-এর।

Advertisement

১৭টি আসন নিয়ে তৈরি বালিয়া পঞ্চায়েত। ২০১৩ সালে আটটি আসন পায় কংগ্রেস। তৃণমূল চারটি, পাঁচটি পায় সিপিএম। তৃণমূল এবং সিপিএম বোঝাপড়া করে বোর্ড গড়লে প্রধান হন সিপিএমের মধুসূদন দাস। উপপ্রধান হন তৃণমূলের পিটার হাঁসদা। বছর ঘুরতেই সিপিএমের নওপাড়া থেকে নির্বাচিত সদস্য বৈজয়ন্তী ফুলমালি কংগ্রেসে যোগ দিলে কংগ্রেসের ৮ সদস্য মিলে ৯ জনের সমর্থনে বোর্ড গড়ে। প্রধান হন কংগ্রেসের আব্দুর রাজ্জাক। সিপিএমের অভিযোগে দলত্যাগী বৈজয়ন্তী ফুলমালির সদস্য পদ খারিজ হয়ে যায়।

সেই শূন্য নওপাড়া আসনেই উপনির্বাচন হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রধান-সহ কংগ্রেসের একাংশ যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। সিপিএম থেকেও তৃণমূলে ভিড়েছে। তৃণমূল থেকে নির্বাচিত উপপ্রধান পিটার হাঁসদার অভিযোগ, ‘‘পুরনো তৃণমূল কর্মীদের বাদ দিয়ে যাঁকে এ বার দলের প্রার্থী করা হয়েছে, তিনি বরাবর তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার ফলে তৃণমূলের পুরোনো কর্মী-সমর্থকেরা বিদ্রোহী হয়ে মানু মাহারাকে নির্দল প্রার্থী করেছে।’’ এ দিকে, ৮-৮ আসন হয়ে টাই হয়ে থাকা বালিয়ায় প্রধান পদ টিকিয়ে রাখতে এক জন সদস্য চাই-ই তৃণমূলের। এই পরিস্থিতিতে বিধায়ক সুব্রত সাহার অনুগামীরা মরিয়া হয়ে আসনটি দখলে নেমেছেন।

বিধায়ক শিবিরের লোক বলে পরিচিত সাগরদিঘির ব্লক সভাপতি তৃণমূলের মতিউর রহমান তাঁদের তরফে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর বরং অভিযোগ, ‘‘দলের উপপ্রধান পিটার হাঁসদা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী দিয়েছেন। আদিবাসী পাড়ায় রাতের অন্ধকারে মদ বিলোচ্ছেন!’’ এই মর্মে তিনি বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে দাবি করেন।

অন্য দলের কী অবস্থা? এই গ্রামে বারবর জিতেছে সিপিএম। সাগরদিঘির জোনাল সম্পাদক পরেশ দাসের দাবি, কিছু কর্মী তৃণমূলে ভিড়লেও ওই আসনে তাঁরাই জিতবেন। তৃণমূলের দু’গোষ্ঠী গ্রামে পয়সা ঢেলে ভোট কেনার চেষ্টা করছেন বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘ভোট কিনে বাজিমাতের চেষ্টা আদিবাসীরা ব্যর্থ করে দেবেন।’’

তবে সবচেয়ে করুণ অবস্থা কংগ্রেসের। গত নির্বাচনে এই গ্রাম সংসদ থেকে ১৭৩টি ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। এ বারেও প্রার্থী রয়েছে। এলাকাবাসীর মত, ওই প্রার্থী রয়েছে নামেই। অনেকেই জানালেন, এখনও সে ভাবে প্রচারে দেখা যায়নি কংগ্রেসের ডলি মণ্ডলকে। ব্লক কংগ্রেস সভাপতি নিরঞ্জন সিংহের অভিযোগ, দলের বুথ সভাপতির বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে এই এলাকায় কংগ্রেসের এই অবস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন