গোষ্ঠী বিবাদ আর নয় — দলনেত্রীর এই বার্তাটা নতুন নয়। তার অবমাননার ঘটনাও নিরন্তর। শেষ সংযোজন, শান্তিপুরের ঘটনা।
নদিয়ার শান্তিপুরের বিধায়ক ও সদ্য কংগ্রেস ত্যাগী অরিন্দম ভট্টাচার্যের সঙ্গে স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যান অজয় দে’র মধ্যে বিবাদ চলছিলই। মঙ্গলবার তা একেবারে প্রকাশ্যে চলে এল, অরিন্দমের ঘনিষ্ট ইয়ার আলি মল্লিককের উপরে হামলা এবং তার পাল্টা পুরপ্রধান অজয় দের দীর্ঘ দিনের ছায়াসঙ্গী উপ-প্রধান আব্দুস সামাদ কারিগরের বাড়িতে বোমাবাজির ঘটনায়।
যুযুধান এই দুই নেতা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল না তুললেও দুই ঘটনা কেন্দ্র করে শাসক দলের যে মুখ পুড়েছে তা মেনে নিচ্ছেন জেলা নেতাদের অনেকেই। তাঁদের কথায়, “দুই নেতার সম্পর্ক এমন জায়গায় যে এটা হওয়ারই কথা ছিল।” জেলা সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস বলছেন, ‘‘ কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে পরে মন্তব্য করব।’’ টানা পাঁচ বারের বিধায়ক অজয় দে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বছর কয়েক আগে। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী অরিন্দম ভট্টাচার্যের কাছে হেরে যাওয়ার পরে সেই বিতন্ডা আরও পেকে উঠেছিল। দিন কয়েক আগে অরিন্দমও পা দিয়েছেন তৃণমূলে, তার পর থেকেই এলাকার কর্তৃত্ব নিয়ে দুই নেতার মধ্যে সাপে-নেউলের সম্পর্ক তৈরি হয়। শান্তিপুরের তৃণমূলের কর্মীরাও ভাগ হয়ে যায়। এরই মধ্যে একদা অজয় দের বিরুদ্ধে আরসিপিআই এর প্রাথী হয়েছিলেন ইয়ার আলি মল্লিক। পরে তিনি অরিন্দম ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেন। অভিযোগ, এই ইয়ার আলি মল্লিককে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মারধর করা হয়। সোমবার রাত ন’টা নাগাদ অরিন্দম গিয়েছিলেন অজয় দে’র প্রভাবিত দলীয় কার্য়ালয়ে। তিনি যাওয়ার পরে অজয়ের ঘনিষ্টরা জড় হতে থাকে। অরিন্দমবাবু চলে যেতে কার্যালয়ের সামনে ইয়ারকে দেখতে পেয়ে শুরু হয় মারধর। ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। রাতেই তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতেরা সকলেই অজয়-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। রাতেই খবর পাওয়া যায় বোমা পড়ে আব্দুস সামাদ কারিগরের বাড়িতে। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ বাড়ি থেকে তাজা বোমা উদ্ধার করে। উপ পুর-প্রধানের অনুগামীদের দাবি এই কাজ অরিন্দমের লোকজনের।
মঙ্গলবার রাতে ঘটনার প্রতিবাদে অজয় দের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। অজয় বলেন, “আমরা পুলিশকে বলে দিয়েছি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে।” বিধায়ক অরিন্দম বলছেন, “কারা বোমা মেরেছে জানি না। ইয়ার আলিকে যারা মেরেছেন তাদের কঠোর শাস্তি চাইছি।” পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, “বোমা মারার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তবে আর একটি মারধরের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”