প্রতীকী ছবি।
সাতসকালে মোবাইলের নেট অন করলেই বানের জলের মতো ঢুকতে শুরু করে— সুপ্রভাত, দিন ভাল কাটুক কিংবা ধোঁয়া ওঠা কাপের ছবি। রাতে নিয়ম করে শুভ রাত্রি, হাই ওঠা ক্লান্ত ছবি। সেই সঙ্গে দিনভর হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপে আড্ডায়, মজায়, তর্কে, কবিতায় রীতিমতো তুফান ওঠে।
নবাবের জেলায় কয়েকটি গ্রুপে এ সব কিছুই হয় না। সেখানে চব্বিশটা ঘণ্টা ধরেই ধরেই বিনিময় হয় জরুরি বার্তা। কখনও ভেসে ওঠে—‘খুব দ্রুত ও পজিটিভ লাগবে।’ জবাবও আসে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে—‘চিন্তা করবেন না। হয়ে যাবে। এখনই হাসপাতালে লোক পাঠাচ্ছি।’
বেলডাঙা ঝুনকা গ্রামের কয়েক জন প্রথম এই গ্রুপ চালু করেন। এখন তাঁদের তিনটে গ্রুপ মিলে সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০০০। যাঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন জেলায় ও জেলার বাইরে। রবিবার সেই গ্রুপের সদস্যরাই ঝুনকা গ্রামে রক্তদান নিয়ে সচেতন করতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানেই পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জেলার প্রত্যেক এলাকায় এই ধরনের গ্রুপ তৈরি করার পরামর্শ দেন।
কারও কোথাও রক্তের দরকার পড়লেই জানানো হয় এই গ্রুপগুলোতে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় রক্তের খোঁজ। কখনও দিয়ে দেওয়া হয় কাছাকাছি কোনও রক্তদাতার ফোন নম্বর। কখনও আবার নিজেই ছুটে যান গ্রুপের কোনও সদস্য। গত অগস্ট মাসে এই গ্রুপের কাজ শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ২৪০ জনকে রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এই গ্রুপের সদস্যরা।
সম্প্রতি জলঙ্গির আনারুল শেখের এবি নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন ছিল। এই গ্রুপের মাধ্যমেই বিষয়টি জানতে পেরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দিয়ে এসেছেন বেলডাঙার ওসি জামালুদ্দিন মণ্ডল।
কী ভাবে তৈরি হল গ্রুপ?
গ্রুপের অ্যাডমিন তারিফ হোসেন বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের পরে গ্রামের এক প্রসূতির বি পজিটিভ রক্তের দরকার ছিল। বিষয়টি আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করি। সেটা দেখে বহরমপুরের বাসিন্দা নিমার্ল্য সাহা রক্ত দেন। তার পরেই মাথায় আসে এই গ্রুপ তৈরির কথা। এখন গ্রুপের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিনে। মহিলাদের জন্যও আলাদা গ্রুপ করা হয়েছে। সেই গ্রুপের দায়িত্বে আছেন বহরমপুরের বাসিন্দা সুস্মিতা দত্ত।’’
এ দিন পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস আগে জেলায় রক্তের সঙ্কট এমন অবস্থায় পৌঁছেছিল যে পুলিশকেও এলাকায় এলাকায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করতে হয়েছিল। ২০১১ সালের আদমসুমারি হিসাবে এই জেলায় লোকসংখ্যা প্রায় ৭১ লক্ষ। সেটা এখন বেড়ে হয়তো প্রায় ৯০ লক্ষে পৌঁছবে। জেলার প্রতিটা এলাকায় এই ধরনের গ্রুপ তৈরি করুন। আমরা পুলিশ প্রশাসন পাশে থাকব। যেন কাউকে রক্তের অভাবে মরতে না হয়। আমার বিশ্বাস, নিজেদের মধ্যে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ থাকলে কখনই রক্তের সঙ্কট দেখা দেবে না।’’