•চর-দখল: বুধবার ছিল বিশ্ব জল দিবস। আর, এ দিনই ভোর রাতে শক্তিপুরে গঙ্গার বুকে জেগে উঠল চর। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
জাব্বার আলির দিব্যি মনে আছে —‘‘এই তো সে দিনের কথা। কেমন হুটোপাটি করে ছেলেপিলেরা নদীতে নেমে পড়ত। তার পর সাঁতরে এপাড় থেকে ওপাড়ে। আর মাছ ধরা। আমরাই তো কত মাছ ধরেছি।’’
তবে সে সব অবশ্য গরমে। নদী তখন তিরতির করে বইত। বর্ষাকালে ও-মুখো হতো না কেউ।
আর এখন? ‘‘নদী ভরা ধান,’’ হাসতে হাসতে বললেন জাব্বার।
মজারই কথা বটে। একটা সময় কাতলামারি, রানিনগর গোধনপাড়া থেকে রেশমের বস্তা বোঝাই নৌকা চলত গুমানি নদী দিয়ে। এলাকার মানুষের যাতায়াতেরই পথ ছিল এই নদী। এই নদীটাই ভরসা ছিল কত মৎস্যজীবীর। বচ্ছরভর ভাতের পাতে মাছের অভাব হতো না বাসিন্দাদের।
কিন্তু এখন আর সেই নদীটারই কোনও অস্তিত্ত্ব নেই। কোথাও ঢালু জমিতে চাষ হয়েছে ধান, আবার কোথাও নদীর বুক চিরে তৈরি হয়েছে রাস্তা। আর তার জেরে বর্ষাকালে উপরি পাওনা, ‘জলমগ্ন এলাকা’। জল ঠেলে যাতায়াতের দুর্ভোগ তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে জল জমে থাকায় কিছু কিছু জমিতে চাষ হয় না দীর্ঘ সময়। তা ছাড়া বাঁধ তৈরির জন্য তিন ফসলি জমি হয়ে গিয়েছে এক ফসলি।
রানিনগরের শেয়ালমারি হয়ে ইসলামপুরের ভৈরবে মিশেছিল গুমানি। প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী এখন একটা নিচু এলাকা মাত্র। মানচিত্রে এখনও বয়ে চলেছে সে, বাস্তবে যদিও বেপাত্তা। সে সব নিয়ে অবশ্য কোনও হেলদোল নেই প্রশাসনের। গ্রাম পঞ্চায়েতই তো সরকারি টাকায় গুমানির বুকে বাঁধ দিয়ে পাকা রাস্তা করেছে রাতারাতি। গোয়াস এলাকার গজেপাড়া এবং গোকুলপুরে মাঝে সেই রাস্তায় এখন দিনরাত পারাপার করছে এলাকার মানুষজন। কিন্তু যাদের দায়িত্ব ছিল নদীটাকে রক্ষা করা, তারাই কেন চুপিসাড়ে মেরে ফেলছে তাকে?
বর্তমান টেকারায়পুর বালুমাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের ফৌওজিয়া বিবির কথায়, ‘‘বাম আমলে ওই বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। আমরাও তো ওই ঘটনায় স্তম্ভিত। একটা সরকারি সংস্থা নদীর বুক চিরে রাস্তা করল, অথচ মাঝে একটা কালভার্ট তৈরির কথা প্রয়োজন মনে করল না।’’
তৎকালীন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অবুল হোসেন অবশ্য বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, ‘‘ওটা আমাদের বড় ভুল। গজেপাড়া এলাকার মানুষ নদীর ও-পারে বাড়ি করার পরে আমাদের চাপ দিতে থাকেন রাস্তা করার জন্য। আমাদের ইচ্ছে ছিল একটা কালভার্ট বা পাইপ দিয়ে রাস্তাটা তৈরি কারার। কিন্তু টাকার অভাবে সেটা আর করা হয়নি।’’
জাব্বারের সেই পুরনো গুমানি এখন তাই গুমরে কাঁদে।