খাটে বসে রাতভর জল মাপল পল্লিশ্রী

দিনভর টিপটাপ বৃষ্টি লেগেই ছিল। কখনও খানিক জোরে, কখনও একটু আস্তে। যদিও রাত বাড়তে হঠাৎই বদলে গেল ছবিটা। দমকা হাওয়ার সঙ্গে অঝোরে বৃষ্টি। সে প্রায় আকাশ ভাঙার জোগাড়।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৭
Share:

জল থইথই অরবিন্দ রোড। — সুদীপ ভট্টাচার্য

দিনভর টিপটাপ বৃষ্টি লেগেই ছিল। কখনও খানিক জোরে, কখনও একটু আস্তে। যদিও রাত বাড়তে হঠাৎই বদলে গেল ছবিটা। দমকা হাওয়ার সঙ্গে অঝোরে বৃষ্টি। সে প্রায় আকাশ ভাঙার জোগাড়।

Advertisement

আর এক রাতেই কৃষ্ণনগর কার্যত নদিয়ার ভেনিস।

জলমগ্ন শহরের প্রায় সব নিচু এলাকাই। অরবিন্দ রোড, পল্লিশ্রী, উত্তরকালীন নগরের শুকুলমাঠ, নাজিরাপাড়া, কাঠালপোতা, নগেন্দ্রনগরের একাংশে কোথাও কোমরজল তো কোথাও হাঁটু ছুঁইছুঁই। নিকাশিনালা উপচে জল ঢুকে পড়ে বাড়ির অন্দরমহলেও। এই বুঝি জল ঢুকল শোওয়ার ঘরেও! আতঙ্কে রাতজাগা বহু বাড়ি। মোমবাতি হাতে বারবার রাস্তার দিকে উঁকিঝুকি— জল কি আরও বাড়ল! ইমার্জেন্সি লাইটে ডিনার। (কারণ বৃষ্টি বাড়তেই তো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন) আর সারারাত দুশ্চিন্তা। বৃষ্টি যে থামেই না!

Advertisement

যদি বা থামল, বৃহস্পতিবার জল নামার চিহ্ন নেই। লক্ষণ নেই বিদ্যুৎ আসারও। বুধবার রাত ন’টা নাগাদ বিদ্যুৎ গিয়ে কারেন্ট আসতে পরের দিন বিকেল গড়িয়ে যায়। কিছু কিছু এলাকায় জলের তলায় পানীয় জলের ট্যাপ। ফলে জল আনতে স্থানীয় বাসিন্দাদের হাঁটু জল ঠেলে যেতে হয়েছে উঁচু কোনও এলাকায়। ছোটদের ‘রেইনি ডে’। ঝাঁপ হাফ বন্ধ দোকানপাটের। কেউ কেউ আবার সকাল হতেই গামছা জড়িয়ে কোমর জলে ছুটলেন দোকানে, জিনিসপত্রের হাল দেখতে। শহরের বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, এই পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়। বর্ষা মানেই ভারী বৃষ্টি, আর বৃষ্টি মানেই কোমরজল।

অরবিন্দ রোডের বাসিন্দা মনোতোষ চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা ভাল নয়। যার ফলে প্রতি বছর বর্ষাকালে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বুধবার রাতে থেকে পাড়া জলমগ্ন হয়ে। নিকাশিনালার নোংরা জলে ভাসছে ঘর। জলে ভেসে ঘরে ঢুকছে বিষাক্ত পোকামাকড়ও।” অরবিন্দ রোডের গৃহবধু মিঠু দাসও বললেন, “শুধু রাস্তা জলমগ্ন হয়েছে এমন নয়, ঘরেও জল ঢুকেছে। পানীয় জলের ট্যাপ জলের তলায়। রান্নার জন্য তাই পাশের পাড়া থেকে জল আনতে হয়েছে আমাদের।”

একই অবস্থা পল্লিশ্রীর। কোমর সমান জলের জন্য কবি কাজি নজরুল পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক জ্যোতিষ দাস বলেন, “স্কুল জলের তলায়। তাই পুরসভার অনুমতি নিয়ে আপাতত তিন দিনের স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।” পল্লিশ্রীতে মুদিখানার দোকান পীযূষ মজুমদারের। জানালেন, বুধবার রাতে দোকানে জল ঢুকে অনেক মালপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কাঠালপোতা, শুকুলপাড়ারও এক অবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা রাজু দাস, ছোটন কুশারির কথায়, ‘‘ভাল নিকাশিনালা না থাকার জন্যই ভুগতে হচ্ছে আমাদের।’’

কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারম্যান অসীমকুমার সাহার অবশ্য বক্তব্য, ২০০৭ সালের পর এত ভারী বর্ষণ কৃষ্ণনগরের লোকজন দেখেনি। যার ফলেই এই অবস্থা। এর জন্য পুরসভা দায়ী নয়। তাঁর কথায়, ‘‘শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল জমেছে ঠিকই, তবে স্থায়ী ভাবে থাকা ১০টি এবং অস্থায়ী ভাবে আরও ৯টি পাম্পকে কাজে লাগানো হয়েছে। জল বের করে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।”

অসীমবাবুকে সমর্থন জানিয়ে সেচ দফতরের নদিয়ার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয়কুমার সিংহ বলেন, “চলতি বছর গত ২৪ ঘন্টায় সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বছর জানুয়ারি মাস থেকে এ দিন পর্যন্ত ৯০৮.৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ১১৮.৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে!” তবে নদীর জল এখনও ডেঞ্জার লেভেল থেকে দু’মিটার নীচে রয়েছে, জানিয়েছেন সঞ্জয়বাবু।

যদিও নিকাশিনালা নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগের কথা জানাতেই ক্ষোভ উগরে দেন অসীমবাবু। তাঁর দাবি, “শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিকাশিনালার মধ্যে প্লাস্টিক-সহ নানা আবর্জনা ফেলা হয়। যার ফলে নিকাশিনালা মজে গিয়ে জল বেরোতে পারে না। যত দিন না মানুষ সচেতন হচ্ছেন, নালায় প্লাস্টিক-সহ আবর্জনা ফেলা বন্ধ হচ্ছে, তত দিন এই সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন