হেরিটেজ কমিশনের ‘ভুলে ভরা’ বোর্ড
heritage

Heritage:মণিপুর রাজবাড়ির তথ্য-বিকৃতির নালিশ

মণিপুরে চৈতন্যদেব প্রবর্তিত বৈষ্ণব ধর্মমত প্রচারের কাজটি শুরু করেছিলেন নরোত্তম দাস ঠাকুর। খেতুরি মহোৎসব পরবর্তী সময়ে।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৪০
Share:

মাত্র গোটা ছয়েক লাইন। তারই মধ্যে গণ্ডাখানেক মারাত্মক ভুল!

Advertisement

ঘন নীল বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের প্রতীক। ঝকঝকে সাদা হরফে বাংলায় লেখা নবদ্বীপের মণিপুর রাজবাড়ির অতি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। সেখানে রাজবাড়ির বিগ্রহের নাম ভুল। মণিপুর রাজকন্যা হয়েছেন মহারাজের বোন। রাজকুমার বলে যাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর সঙ্গে মণিপুর রাজবাড়ির আদৌ কোনও সম্পর্কই নেই। নীচে ইংরেজিতে পুরোটা অনূদিত। যা দেখে প্রবল ক্ষুব্ধ নবদ্বীপের মণিপুর রাজ পরিবারের সদস্যেরা। ওই বোর্ড দ্রুত সরিয়ে ফেলার জন্য সোমবারই তাঁরা নবদ্বীপের লোকাল হেরিটেজ কমিশনের কাছে লিখিত ভাবে দাবি জানিয়েছেন। রাজ্যের প্রথম ঘোষিত হেরিটেজ শহর নবদ্বীপে শুরু হয়েছে বিভিন্ন হেরিটেজ স্থান ও স্মারকগুলিকে চিহ্নিত করার কাজ। সেই কাজের অঙ্গ হিসেবে অন্য জায়গার সঙ্গে নবদ্বীপের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত মণিপুর রাজবাড়ির ফটকে লাগানো হয়েছে একটি বোর্ড। লেখা— ‘পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন দ্বারা ঐহিহ্যশালী সম্পদ রূপে ঘোষিত, ২০২০।’

সোমবার মণিপুর রাজবাড়ির তরফে রাজকুমার টিকেন্দ্রজিৎ সিংহ এই বিষয়ে একটি লিখিত প্রতিবাদ পত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় হেরিটেজ কমিটির কাছে। সেই লিখিত পত্রে তাঁরা জানিয়েছেন ওই বোর্ডে অনু মহাপ্রভু হয়েছেন ‘অনুপ্রভু’। রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্র সিংহকে সাদামাটা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর পুত্র মহারাজ চৌরজিৎ সিংহ হয়েছেন নরোত্তম ঠাকুর। তাঁর কন্যাকে ওই বোর্ডে লেখা হয়েছে বোন বলে। তাঁর নামও বদলে গিয়েছে ভুলে ভরা বোর্ডে। মহা রাজকুমারি বিম্বাবতী দেবী ওরফে সিজা লাইওইবি দেবীকে লেখা হয়েছে লাইরো বীর দেবী বলে।

Advertisement

টিকেন্দ্রজিৎ সিংহ বলেন, “কাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হেরিটেজ কমিশন এ সব লিখেছে, জানি না। ওই বোর্ডে দেওয়া তথ্য ভুলে ভরা। এতে ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। আমরা চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ভুল বোর্ড খুলে ফেলা হোক।”

নবদ্বীপ লোকাল হেরিটেজ কমিটির চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, “সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ভুলগুলি দ্রুত সংশোধন করে দেওয়ার জন্য।”

এই প্রসঙ্গে নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “মণিপুর রাজবাড়ি নিয়ে দীর্ঘ দিন তথ্য অনুসন্ধান করে সীতারাম মুখোপাধ্যায় ‘রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্র’ বলে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থরচনা করেছিলেন। তাতে উনি লিখেছিলেন মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র ১৭৯৮ সালে নবদ্বীপে আসেন। সঙ্গে কন্যা রাজকুমারি বিম্বাবতী। চৈতন্যভক্ত রাজকুমারি বিম্বাবতীর স্বপ্নাদেশ বাস্তবায়িত করতে প্রতিষ্ঠা করেন অনু মহাপ্রভুর বিগ্রহ। এর অল্প দিন পরেই মহারাজের মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে রাজা হলেন তাঁর পুত্র মহারাজ চৌরজিৎ সিংহ। তিনি মণিপুর রাজবাড়ি, মন্দির প্রভৃতি নির্মাণ করেন। সময় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ।”

যদিও মণিপুরের সঙ্গে বঙ্গদেশের যোগসূত্রটি আরও প্রাচীন। মণিপুরে চৈতন্যদেব প্রবর্তিত বৈষ্ণব ধর্মমত প্রচারের কাজটি শুরু করেছিলেন নরোত্তম দাস ঠাকুর। খেতুরি মহোৎসব পরবর্তী সময়ে। মহারাজ ভাগ্যচন্দ্রের হাত ধরে সেই সম্পর্ক নিবিড়তর হয়। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ তাঁকে ‘রাজর্ষি’ সম্মানে ভূষিত করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন