খুদের প্রণাম। — নিজস্ব চিত্র।
ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শরীর ভেঙে গিয়েছে। পিছু ছাড়ছে না অভাব। ঠিক এমন সময়ে বন্ধু হেমন্ত সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯২৬ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে ৬ মাস তিনি কৃষ্ণনগর শহরের গোলাপট্টিতে হেমন্ত সরকারের বাড়িতে ছিলেন। পরে সেখান থেকে শহরের চাঁদসড়কে ‘গ্রেস কটেজে’ উঠে আসেন। ১৯২৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ১৯২৮ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নজরুল ইসলাম এই ‘গ্রেস কটেজে’ কাটিয়েছিলেন। বুধবার প্রতি বছরের মতো এ বারেও সেখানে কৃষ্ণনগরের সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘সুজন বাসর’ এর উদ্যোগে নজরুল ইসলামের জন্মদিন পালন করা হল। সম্প্রতি রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের উদ্যোগে গ্রেস কটেজ সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। এ দিন ওই সংস্থার উদ্যোগে গ্রেস কটেজের উদ্বোধন করলেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিন কৃতী। তবে ওই অনুষ্ঠানে হেরিটেজ কমিশনের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য এই ‘গ্রেস কটেজ’কে দীর্ঘ দিন ধরে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি ছিল কৃষ্ণনগরের। শেষ পর্যন্ত ২০১২সালে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ‘গ্রেস কটেজ’কে হেরিটেজ ঘোষণা করে। হেরিটেজ কমিশনের উদ্যোগে ২০১২ সাল থেকেই গ্রেস কটেজের সংস্কার কাজ শুরু হয়। সম্প্রতি সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার করল হেরিটেজ কমিশন। আর আপনারা উদ্বোধন করলেন কেন? ‘সুজন বাসর’-এর সদস্য মহম্মদ ইনাসুদ্দিনের দাবি, গ্রেস কটেজ দেখভালের পাশাপাশি তাঁরা সেখানে একটি গ্রন্থাগারও চালু করেছেন। কটেজের চাবিও থাকে তাঁদের কাছে। হেরিটেজ কমিশনে চিঠি দিয়ে নজরুল ইসলামের জন্মদিনে গ্রেস কটেজের উদ্বোধনের কথা
বলা হয়েছিল। তাঁদের আমন্ত্রণও জানানো হয়েছিল। কিন্তু কমিশন তাঁদের উদ্বোধন করতে নিষেধ করেনি। সেই কারণে এ দিন কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের তিন কৃতী ছাত্র সৌম্যদীপ নন্দী, সোহম চক্রবর্তী ও ঐশিক বৈদ্যকে দিয়ে গ্রেস কটেজের উদ্বোধন করানো হয়েছে। ওই তিন জনেই এ বার উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে যথাক্রমে সপ্তম, অষ্টম ও দশম হয়েছেন।
‘সুজন বাসর’ এর সদস্য তথা গ্রেস কটেজের নজরুল পাঠাগারের সভাপতি সিদ্ধার্থ পাল বলেন, “গোলাপট্টিতে হেমন্ত সরকারের বাড়িতে থাকার সময় ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’-এর মতো একাধিক সাড়া জাগানো কবিতা লিখেছিলেন। গ্রেস কটেজে থাকার সময় ‘মৃত্যু ক্ষুধা’ উপন্যাসের পাশাপাশি বাংলায় একাধিক গজল ও কবিতাও লিখেছিলেন।”