Caks

কেক চিনিয়েছিলেন ফিলিপ আর রোজারিও

কৃষ্ণনগর মঙ্গলাপুকুরের প্রবীণ বাসিন্দা সমীর স্টিফেন লাহিড়ীর কথায়, কৃষ্ণনগরের খ্রিস্টান মহল্লায় বড়দিনে ঘরে ঘরে কেকের চল হয় আটের দশকের পরে।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বড়দিন এলেই কৃষ্ণনগরের খ্রিস্টান মহল্লার প্রবীণদের মনে পড়ে জন রোজারিও আর ফিলিপ বৈদ্যের কথা। ওঁদের হাত ধরেই নাকি কেক এসেছিল বড়দিনের উৎসবে! তার আগে কৃষ্ণনগর-সহ নদিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে পৌষমাখানো বড়দিনে খ্রিস্টানপল্লি নবান্নের গন্ধে ম-ম করত। ভ্যানিলা বা স্ট্রবেরি নয়, চাপড়া, তেহট্ট, মালিয়াপোতায় ভেসে বেড়াত নলেন গুড়ের সুঘ্রাণ। জিশুর জন্মদিন চিঁড়ে, মুড়কির সঙ্গে গোকুলপিঠে, ভাজাপুলি বা পাটিসাপ্টা দিয়েই উদ্‌যাপন হত। নদিয়াতে খ্রিস্ট উৎসবে কেক এসেছে অনেক পরে।

Advertisement

কৃষ্ণনগর মঙ্গলাপুকুরের প্রবীণ বাসিন্দা সমীর স্টিফেন লাহিড়ীর কথায়, কৃষ্ণনগরের খ্রিস্টান মহল্লায় বড়দিনে ঘরে ঘরে কেকের চল হয় আটের দশকের পরে। ওই সময় এলাকার অনেক ছেলে বিদেশে হোটেলে কাজ করতে যান। তাঁরা বড়দিনের ছুটিতে এসে বাড়িতে কেক তৈরির প্রথা চালু করেন। তবে তারও আগে মঙ্গলাপুকুরের এক বাসিন্দা ফিলিপ বৈদ্য তাঁর প্রতিবেশীদের চিনিয়েছিলেন কেকের স্বাদ। সে কালে গ্রামোফোন কোম্পানির চাকুরে ফিলিপ বড়দিনে বাড়ি ফিরতেন ফির্পো, ফ্লুরিজের সুস্বাদু কেক নিয়ে। ফিলিপ বৈদ্য সেই কেক তুলে দিতেন সমীরবাবুর মতো মঙ্গলাপুকুরের ছোট এবং বড়দের হাতে। সেটা পাঁচের দশক। তবে কৃষ্ণনগরে খ্রিস্টান মহল্লায় বাড়ি বাড়ি কেক তৈরির কাজের সূচনা করেন জন রোজারিও। সেটা আটের দশক। তিনি পাঁচতারা হোটেলের শেফ ছিলেন। তিনি একবার বড়দিনে বাড়িতে নিজে কেক তৈরি করলেন। সমীরবাবু বলেন, “এখনও মনে আছে এক বিরাট ফর্দ নিয়ে আমাদের নিয়ে বাজারে গেলেন জন। নামই শুনিনি এমন সব জিনিস দিয়ে নিজের ঘরে বসে রোজারিও যত্ন করে তৈরি করলেন কেকের মিশ্রণ। পাড়ার বেকারিতে বেক হল। বিকেলে আনতে যাওয়ার সময় কী উত্তেজনা! বাদামি মাথাওয়ালা সে কেকের গন্ধ যেন এখনও নাকে লেগে আছে!’’

তিনি জানান, সেই শুরু। এখন বড়দিনে বাড়িতে কেক তৈরি করেন না এমন খ্রিস্টান পরিবার এলাকায় নেই বললেই চলে।

Advertisement

তবে এবারে আরও অনেক কিছুর সঙ্গে কেক তৈরির আগ্রহেও ভাটা পড়েছে। অনাদিনগরের বাসিন্দা মঞ্জুলা মল্লিক যেমন জানালেন, “গত বার ২৫ কেজি কেক তৈরি করেছিলাম। এবার অর্ধেকের কম হচ্ছে। অন্য বারের মতো বাড়িতে লোকজন আসা এ বার বন্ধ। আত্মীয় বন্ধুরাই যখন আসতে পারবে না, তা হলে আর অত কেক করে কী হবে?” বড়দিন পালনে নানা নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেকেই এবার উৎসবের মেজাজটা খুঁজে পাচ্ছেন না।

একই কথা জানালেন শহর থেকে দূরের মালিয়াপোতা প্যারিশের অন্তর্গত বালিউড়া চার্চের ক্যাটিকিষ্ট সুশান্ত মণ্ডল। তিনি বলেন, “করোনা আবহে এবারের উৎসব একেবারেই সংক্ষেপ। ফলে বড়দিনের আনন্দ অনেকটাই ম্লান। সপ্তাহব্যাপী উৎসব বন্ধ রাখা হয়েছে। মানুষের মনে বড়দিন ঘিরে সেই আনন্দ নেই।”

সাম্প্রতিক কালে বড়দিন আর কেক যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে। যদিও জিশুর সঙ্গে কেকের আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই বলেই মনে করেন পণ্ডিতেরা। যতদূর জানা যায় প্রাচীন গ্রিসে প্রথম দুধ, মধু, ময়দা এবং শুকনো ফল দিয়ে তৈরি করা হয় প্লাকাউস নামে কেক। এটি ছিল মঙ্গল বা শুভর প্রতীক। তাই নবজাতকের জন্মের পর কেক তৈরি হত। অনুমান, সেই থেকে জন্মদিনে কেক কাটার প্রচলন পশ্চিমি দুনিয়ায়। জিশুর জন্মদিনে সেই প্রথার অনুসরণে কেকের আগমন।

বড়দিনের কেকের কথা বলতে গিয়ে সুশান্ত মণ্ডল বলেন, “আগে বড়দিনে কেক তৈরি বা খাওয়ার বিশেষ রেওয়াজ ছিল না। নানারকম পিঠে-পুলি, মালপোয়া দিয়েই বড়দিনের উৎসবে অতিথি আপ্যায়ন করা হত। গ্রামের দিকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ এই সময় পিঠে-পুলির সঙ্গে নতুন ধানের চিঁড়ে এবং নলেন গুড়ের মুড়কি বানাতেন। তখন কোথায় কেক!’’

এ বার অবশ্য অতিমারির কালে কেক নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন খ্রিস্টভক্তরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন