দইয়ের হাট নেই, নাম তবু দৈহাট্টা

কোথাও গুড়িমহল কোথাও বা রুটিমহল, রাস্তার নাম— কেন এমন নামকরণ, সেই সব বিচিত্র নামের অলি-গলি চেনাচ্ছে আনন্দবাজারকোথাও গুড়িমহল কোথাও বা রুটিমহল, রাস্তার নাম— কেন এমন নামকরণ, সেই সব বিচিত্র নামের অলি-গলি চেনাচ্ছে আনন্দবাজার

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০১:৩৩
Share:

দই-এর হাট না বসলেও দৈহাট্টা রোডের মিষ্টি ও মিষ্টির দোকানের দই আজও প্রসিদ্ধ।

এই শহরের অনেকেই জানেন না, এই শহরেই রয়েছে বাঁশহাট্টা লেন নামে একটি গলি। আছে দৈহাট্টা রোডও। পাউন্ড রোডের কথা অনেকে শুনেছেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না, বহরমপুর শহরের প্রাচীনতম এলাকা খাগড়ার একটি পথের নাম ‘পাউন্ড রোড’। বাঁশহাট্টা ও দৈহাট্টা নামের জন্মসূত্রের কথাও অনেকের অজানা।

Advertisement

‘হাট’ শব্দ থেকে এসেছে ‘হাট্টা’ কথাটি। ইংরাজি ‘পাউন্ড’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ গবাদিপশুর খোঁয়াড়। খাগড়া সোনাপট্টির কাছাকাছি এলাকায় মণীন্দ্রচন্দ্র রোড থেকে শুরু করে ভাগীরথীমুখি উত্তর ও দক্ষিণ দিকে বৃক্ষের শাখা-প্রশাখার মতো ছড়িয়ে গিয়েছে একটি পথ। আদিকালে সেখানে বাঁশ বিক্রি হত। কাছেই ঘাটবন্দর। বন্দরেও বাঁশের প্রয়োজন পড়ত। তার ফলে সেখানে বাঁশের বিরাট হাট বসত। সেই থেকে নামকরণ হয় বাঁশহাট্টা লেন।

তার পাশেই মাটির হাঁড়ি কলসির বাজার বসত। তার জন্য নাম হয় হাঁড়িহাট্টা লেন। তার পাশেই চালের পাইকারি বাজার থাকায় এলাকার নাম চালপট্টি। হাঁড়িহাট্টায় আজও মাটির হাঁড়ি -কলসি বাজারের অস্তিত্ব রয়েছে। চালপট্টিতে রয়েছে চালের আড়ত।

Advertisement

সোনাপট্টির গা লাগোয়া মণীন্দ্রচন্দ্র রোড থেকে শুরু করে দৈহাট্টা রোডটি পূর্ব দিকে খাগড়া পুলিশ ফাঁড়ির পাশ দিয়ে চলে গিয়ে কালিকাতলা হয়ে মিশেছে দয়ানগর রোডের সঙ্গে। ওই এলাকায় কয়েক পুরুষের বসবাস অমরেশ বসাকদের। তিনি বলছেন, ‘‘বাপ-ঠাকুর্দার কাছে শুনেছি, এই এলাকায় এক সময়ে দইয়ের হাট বসত। সেই হাট ছিল খুব প্রসিদ্ধ। এখন দইয়ের হাট বসে না। কিন্তু নামটি রয়ে গিয়েছে।’’ দই-এর হাট না বসলেও সেখানকার মিষ্টি ও মিষ্টির দোকানের দই আজও প্রসিদ্ধ।

খাগড়া পুলিশ ফাঁড়ি লাগোয়া দৈহাট্টা রোড ও বড় কুঠি রোডের সংযোগস্থল থেকে শুরু হয়ে উত্তর দিকে শ্যামানন্দ বাগচি লেনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটি পথ। ব্রিটিশ আমলে ওই এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্যের খুব রমরমা ছিল। সেখানে গবাদিপশুর খোঁয়াড় ছিল সেই আমলে। তার থেকে ব্রিটিশ আমলে ওই পথের নামকরণ হয় ‘পাউন্ড রোড’।

খাগড়ার অলিগলি তস্যগলি পেরিয়ে প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্যের বাড়ি তেলগড়িয়া নামের একটি পুকুর লাগোয়া এলাকায়। ওই পুকুরের নামে ওই এলাকার একটি পথের নাম তেলগড়িয়া লেন। ওই পুকুর ঘিরে এলাকায় নানা রকম মিথ রয়েছে।

এমনকি শহর বহরমপুরে ক্ষৌরকার বা নাপিতের নামেও পথের নামকরণ রয়েছে। গোরাবাজার এলাকার রুটিমহলের পশ্চিমপ্রান্ত থেকে শুরু হয়ে কাপুড়িয়া পট্টি রোড়ের পূর্ব দিকে মিশেছে ‘ছেদি নাপিতের গলি’। জনশ্রুতি, শতবর্ষ আগে ওই এলাকায় ছেদিলাল নামে এক জন নাপিত ছিলেন। তাঁর নামে ওই গলিটির নাম হয় ‘ছেদি নাপিতের গলি’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন