চলছে চোলাই

আসে নৌকা, গড়িয়ে যায় সাইকেলেও

একই কথা বেসরকারি সংস্থার কর্মী হারান বিশ্বাসের মুখেও। তাঁর আক্ষেপ, “সব জানা সত্ত্বেও প্রতিবাদ করার কেউ নেই। যে প্রতিবাদ করবে, বিপদে পড়বে। এক দিকে পুলিশ, অন্য দিকে রাজনৈতিক নেতারা।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার ও মনিরুল শেখ 

রানাঘাট ও কল্যাণী শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৪৮
Share:

শূন্য-দৃষ্টি: বিষমদ কাণ্ডে মৃত কৃষ্ণ মাহাতোর স্ত্রী এবং ছেলে। নৃসিংহপুরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ

মদনপুর রেলবাজারের পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে হঠাৎই দাঁড়িয়ে পড়েন আনাজ বিক্রেতা রাম হালদার। চোখ নাচিয়ে বলেন, “কী দেখছেন, মদের দোকান? বলতে পারেন, আমাদের এলাকার অনেক পুরানো ইতিহ্য এটা। বাম আমল থেকেই চলছে। তবে এখন গুরুত্ব আরও বেড়েছে। আগে এলাকার লোকে মদ খেতে আসত। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে।”

Advertisement

একই কথা বেসরকারি সংস্থার কর্মী হারান বিশ্বাসের মুখেও। তাঁর আক্ষেপ, “সব জানা সত্ত্বেও প্রতিবাদ করার কেউ নেই। যে প্রতিবাদ করবে, বিপদে পড়বে। এক দিকে পুলিশ, অন্য দিকে রাজনৈতিক নেতারা। বাধ্য হয়ে মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া উপায় থাকে না।” এলাকার সুমিত্রা মণ্ডলের আক্ষেপ, “এই চোলাইয়ের জন্য বহু পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেল! মাঝে-মাঝে পুলিশ এসে ধরপাকড় করে। দু’চার দিন পরে ফের যে-কে-সেই।”

এক সময়ে কল্যাণী শহরের মেন স্টেশনের পাশে খাদ্য নিগমের গুদামের পাশে চোলাই বিক্রি করতেন এক মহিলা। সকালে নৈহাটি থেকে তিনি চোলাই নিয়ে আসতেন। এখন অবশ্য সেই ঠেক নেই। মূল শহরেও চোলাইয়ের বালাই নেই। কিন্তু এখনও সীমান্তের ভুট্টাবাজার ও কাঁচরাপাড়া পঞ্চায়েতের চরের কিছু গ্রামে চোলাই কারবার চলছে। যদিও পুলিশের দাবি, প্রত্যন্ত ওই এলাকায় লুকিয়ে-চুরিয়ে কেউ চোলাই মদ তৈরি করলেও সেটা ব্যাপক আকারে হয় না।

Advertisement

ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, মাঝে-মধ্যে নদীতে নৌকা ভিড়িয়ে কয়েক জন চোলাই মদ তৈরি করে। পুলিশ তাড়া করলেই নৌকা নিয়ে হুগলির দিকে চলে যায়। আবার অনেকে নৌকায় হুগলি থেকে চোলাই এনে চরের বিভিন্ন গ্রামে বিক্রি করে। স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ মাহাতোর দাবি, শান্তিপুরের বিষমদ কাণ্ডে কল্যাণীরও দুই বাসিন্দা মারা গিয়েছেন। ওঁরা মড়া পোড়াতে গিয়ে চন্দনের ঠেকে মদ খেয়েছিলেন। ওই এলাকাতেও মাঝে-মধ্যেই চোলাই কারবার গজিয়ে ওঠে। পুলিশ হানা দিলে কিছু দিন বন্ধ থাকে মাত্র। পরে আবার শুরু হয়।

গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, হুগলির নানা জায়গা থেকে জারবন্দি চোলাই ভাগীরথী পেরিয়ে এ দিকে এসে জমা হচ্ছে। মোটরবাইক অথবা ছোট গাড়িতে সেই মদ চলে যায় মদনপুর, শিমুরালি, পালপাড়া, চাকদহ, পায়রাডাঙা, হবিবপুর, ধানতলা, গাংনাপুরের নানা ঠেকে। বেশ কিছু যুবক এই কাজে যুক্ত। দূরত্বের উপরে ২০ লিটার ব্যারেল প্রতি তারা টাকা পায়। দোকান ছাড়াও সাইকেলে করে চোলাই বিক্রি করে এক শ্রেণির বিক্রেতা।

পূর্ব রেলের শিয়ালদহ-রানাঘাট শাখার মদনপুর রেলগেট পার করেই বাঁ দিকে আপ প্ল্যাটফর্মের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা চলে গিয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে কল্যাণনগর হয়ে নানা জায়গায় যাওয়া যায়। পথ সংক্ষেপ হওয়ার কারণে এই রাস্তা দিয়ে বহু মানুষ চলাচল করেন। শিমুরালি বাজারের কাছে রয়েছে ঠেক। চাকদহের বিভিন্ন জায়গায়, গাংনাপুর রেল স্টেশনের কাছেও ঠেক রয়েছে।

পুলিশের দাবি, মাঝে-মধ্যেই বেআইনি মদের ঠেকে হানা দেওয়া হয়। ধরপাকড় হয়, চোলাই বাজেয়াপ্ত হয়। দরকারে ফের হবে। নিন্দুকেরা বলছে, লোক-দেখানো অভিযানের ফাঁকে চোলাই কারবারে ভরসা পুলিশেরই একাংশ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন