ইংরেজিতে কেমন কথা, হচ্ছে পরখ

‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ’— স্লোগান তুলে বাম আমলে প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দেওয়ার যে মাসুল দিতে হয়েছে বাংলার কয়েকটি প্রজন্মকে, তা শুধরে নিতে ইংরেজি ফেরানো-সহ নানা চেষ্টা চলছে প্রাথমিক স্কুল স্তরে।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫৩
Share:

পড়ুয়ারা যাতে ছোটবেলা থেকেই ইংরেজিতে কথা বলায় সড়গড় হয়, তার জন্য প্রাথমিক স্কুল ছুটির আগে দশ মিনিট করে অভ্যাস করানোর নির্দেশ দিয়েছিল নদিয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। গত বছর দেওয়া ওই নির্দেশে কতটা কাজ হয়েছে তা জানতে এ বার সংসদের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে ‘ইংরেজিতে কথা বলা প্রতিযোগিতা’ও থাকছে।

Advertisement

ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, ছুটির ঠিক আগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথা বলবে। যেমন ‘বাড়ি কোথায়’, ‘কোন ক্লাস’, ‘স্কুলের নাম কী’, ‘বাবা-মায়ের নাম কী’— এ রকম সহজ অথচ দৈনন্দিন দরকারের কিছু কথোপকথন অভ্যাস করবে তারা। পাঠ্য বইয়ের কবিতা, উক্তি, সংলাপও মাঝে-মধ্যে বলতে বলা হবে। নদিয়া জেলা জুড়ে সব প্রাথমিক স্কুলেই এই চর্চা চলছে।

‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ’— স্লোগান তুলে বাম আমলে প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দেওয়ার যে মাসুল দিতে হয়েছে বাংলার কয়েকটি প্রজন্মকে, তা শুধরে নিতে ইংরেজি ফেরানো-সহ নানা চেষ্টা চলছে প্রাথমিক স্কুল স্তরে।

Advertisement

নদিয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রমাপ্রসাদ রায় বলছেন, “প্রাথমিক স্তর থেকে যদি ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজিতে কথা বলা অভ্যেস করানো হয় তবেই ভবিষ্যতে তাদের ভয় কাটবে।’’ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছুটি হয় দুপুর ৩টেয়, তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণির ছুটি সাড়ে তিনটেয়। দুই ছুটির আগেই দশ মিনিট সার বেঁধে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথা বলছে। কৃষ্ণনগরের শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ শিক্ষায়তন থেকে নাকাশিপাড়ার ধর্মদা চারুচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়— প্রায় কোথাওই ব্যতিক্রম নেই। ভুলচুক হলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা শুধরে দিচ্ছেন।

এই অভ্যেসের ফল কেমন হয়েছে তা জানতে ইতিমধ্যে নদিয়ার মহকুমা ও ব্লক স্তরে ‘ইংরেজিতে কথা বলা প্রতিযোগিতা’ শুরু হয়েছে। আগামী ২৩ অক্টোবর কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে জেলাস্তরের প্রতিযোগিতা হবে। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি বলছেন, ‘‘আমি বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখেছি, ছাত্রছাত্রীরা বেশ ভালই ইংরেজিতে কথা বলা অভ্যেস করেছে। কোথাও-কোথাও দু’এক জায়গায় হয়তো ফাঁকফোঁকর রয়েছে। কোথায় তা রয়েছে সেটা আরও স্পষ্ট করে বোঝার জন্যই প্রতিযোগিতার আয়োজন। এতে ছেলেমেয়েরা বাড়তি উৎসাহও পাবে।’’

মুর্শিদাবাদ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি দেবাশিস বৈশ্য আবার দাবি করছেন, বিভিন্ন বৈঠকে প্রধান শিক্ষকদের মৌখিক ভাবে বলেও কাজ হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রথম শ্রেণি থেকে ইংরেজি পড়ানো ফের চালু হওয়ার পরেই কথা সে ভাষায় বলানোর বিষয়েও নজর দিতে বলেছি। অনেক স্কুলের পড়ুয়ারা প্রাথমিক ভাবে কথা বলা শিখেছে।” লালবাগের কুতুবপুর প্রাথমিক স্কুল বা বেলডাঙার সুতিঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরিহরপাড়ার ট্যাংমারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্কুলের পড়ুয়াদের অনেকে ইংরেজিতে কথোপকথন করতে পারে বলে সংসদ সূত্রে দাবি করা হয়েছে। যদিও নদিয়ার মতো তা পরখের ব্যবস্থা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন