কোনও-মতে। দিনভর যাতায়াত এ ভাবেই। মঙ্গলবার বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
ফি বার যা হয়, এ বারও তার অন্যথা হল না। মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য প্রচুর বাস চলে যাওয়ায় মঙ্গলবার দিনভর ভোগান্তি সহ্য করতে হল যাত্রীদের।
শুধু কৃষ্ণনগর ২ ব্লক থেকে সভায় এসেছিল ৩২টি বাস। তার মধ্যে ব্লক অফিস নিয়েছে ১৪টি বাস। বাকি ১৮টির দখল নেন বিভিন্ন অঞ্চলের শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা। অবস্থা এমনিই দাঁড়ায় যে নদিয়া জেলা থেকে সব বাসের জোগান মেলেনি। পড়শি বর্ধমান জেলা থেকে ৮টি বাস আনতে হয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা থেকেও বেশ কিছু বাস এসেছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। আর মুর্শিদাবাদ থেকে গিয়েছে ১৩০ টি বাস।
ফলে সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটে বাস কার্যত উধাও। মুষ্টিমেয় বাস চলেছে। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ধুবুলিয়া বাজারে বহুক্ষণ দাঁড়িয়েও বাসের দেখা মেলেনমি। হুশহুশ করে চোখের সামনে দিয়ে রিজার্ভ করা বাস বেরিয়ে গিয়েছে। বাড়তি ভাড়া গুনে লোকজন অটো ধরতে হয়েছে।
নাকাশিপাড়ার শালিগ্রাম থেকে আড়াই মাসের শিশু নিয়ে কৃষ্ণনগরে চিকিৎসা করাতে আসছিলেন ফুলমনি বিবি। গ্রাম থেকে অটোয় এসেছেন ধুবুলিয়া পর্যন্ত। বাস না থাকায় ফের অটো পাল্টে গেলেন কৃষ্ণনগরে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এমন ভুগতে হবে জানলে আজ রাস্তাতেই বেরোতাম না।’’ একই অবস্থা কৃষ্ণনগর-রানাঘাট, কৃষ্ণনগর-করিমপুর রুটেও। সুযোগ বুঝে প্রায় প্রতি রুটেই টোটো ও অটোওয়ালারা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া নিয়েছেন।
চাপড়ার সৌরভ মণ্ডল জানান, অন্য দিন লোকাল ও এক্সপ্রেস বাসের ছড়াছড়ি থাকে। পাঁচ মিনিট দাঁড়ালেই বাস মেলে। এ দিন বাজারে আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস না পেয়ে তিনি অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে আসেন কৃষ্ণনগরে। মায়াপুর বাসস্ট্যান্ডে বহু ক্ষণ দাঁড়িয়েও বাস না পেয়ে শেষমেশ অটো ধরে চৌগাছায় যান এক যাত্রী।
মুর্শিদাবাদে রোজ সাড়ে সাতশো বাস চলে। তার মধ্যে ১৩০টি তুলে নেওয়া হয় সোমবার দুপুরের পর থেকেই। ফলে সেখানেও ভোগান্তি হয়েছে রাস্তায় বেরনো মানুষের। বহরমপুর থেকে রোজ ইসলামপুর যাতয়াত করেন মাহামুদা রহমান। তিনি জানান, রুটে বাস কম থাকায় এ দিন খুব বেশি রকম ভিড় হয়েছিল। যদিও বাস মালিকেরা যাত্রী সমস্যার কথা মানতে চাননি।
ফেডারেশন অব বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে মুর্শিদাবাদ জেলার সহ-সম্পাদক রথীন মণ্ডলের দাবি, “আমাদের জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নদিয়া এখান থেকে ১৩০টি বাস নিয়েছে। তবে যাত্রী পরিবহণে এর বিশেষ প্রভাব পড়েনি।” তা কি সম্ভব? রথীনের দাবি, “এমনিতেই অনেক ছোট গাড়ি বিভিন্ন রুটে চলে। তার ফলে বাসে লোক কম হয়। তার উপরে বালির ঘাটে দূর্ঘটনার পর থেকে বাসে লোক কমেছে। ফলে বাস কমায় যাত্রীদের সমস্যা হয়নি।”
ঘরে বসে অনেক কথাই বলা যায়। বিশেষত তা যদি প্রশাসন এবং তার কর্তাদের পক্ষে যায়। পথের হাল শুধু পথিকই জানে!