মাথায় ভাঙবে না তো জীর্ণ বাড়ি, ত্রস্ত রানাঘাট

ঠিক এক সপ্তাহ আগের ঘটনা। রানাঘাট পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বাসপাড়ায় গভীর রাতে আচমকা ভেঙে পড়ে একটি পুরনো বাড়ির ছাদ। চাপা পড়েন ওই বাড়ির এক দম্পতি ও তাঁদের দু’বছরের সন্তান অর্ণব পাল। জখম অবস্থায় তিন জনকেই তড়িঘড়ি ভর্তি করানো হয় রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। ওই দম্পতি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু বাঁচানো যায়নি অর্ণবকে।

Advertisement

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০১:৫০
Share:

বিপজ্জনক বাড়ি। রানাঘাটের মহাপ্রভুপাড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

ঠিক এক সপ্তাহ আগের ঘটনা। রানাঘাট পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্বাসপাড়ায় গভীর রাতে আচমকা ভেঙে পড়ে একটি পুরনো বাড়ির ছাদ। চাপা পড়েন ওই বাড়ির এক দম্পতি ও তাঁদের দু’বছরের সন্তান অর্ণব পাল। জখম অবস্থায় তিন জনকেই তড়িঘড়ি ভর্তি করানো হয় রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। ওই দম্পতি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু বাঁচানো যায়নি অর্ণবকে।

Advertisement

গত ১৭ মে, রবিবারের ওই ঘটনার পরে ওয়ার্ডে ছুটে এসেছিলেন পুরসভার লোকজন। প্রায় তিনশো বছরের জীর্ণ বাড়িটি দেখে তাঁরা সংস্কার করার কথাও বলে গিয়েছেন। কিন্তু শহরের বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, পুরসভা এই পুরনো জীর্ণ বাড়িটির দিকে আগে নজর দিলে এ ভাবে হয়তো ওই শিশুকে হারাতে হত না।

শুধু বিশ্বাসপাড়া নয়, রানাঘাট পুরসভা এলাকায় এরকম আড়াইশো-তিনশো বছরের বহু জীর্ণ বাড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কোনও বাড়ি ফাঁকা পড়ে থাকে। কিন্তু সেই বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে ভয় পান পথচারীরা। কোথাও আবার কোনও জীর্ণ বাড়ির একতলায় সবসময় সিঁটিয়ে থাকেন সেই বাড়ির বাসিন্দারা। কোথাও শরিকি সমস্যা, কোথাও আর্থিক অনটনের কারণে বাড়িগুলো সংস্কার করা হয় না।

Advertisement

রানাঘাট মহাপ্রভুপাড়ার পার্কস্ট্রিট এলাকায় মল্লিকদের দোতলা বাড়িটাকে দেখলেই যেমন ভয় হয়। মনে হয়, এই বুঝি ভেঙে পড়বে। রাস্তার ধারে ওই বাড়ির একাংশ ভেঙে সাইকেল গ্যারাজ তৈরি করা হয়েছে। দোতলাটাও এখন আর ব্যবহার করা যায় না। কোনও রকমে নীচের তলায় বাস করেন জলেশ্বর মল্লিকরা। পেশায় ব্যবসায়ী জলেশ্বরবাবু জানান, প্রায় এক বিঘা জমির উপর এই বাড়ির বয়স প্রায় ২২৫ বছর। বিশ্বাসপাড়ার পালবাড়ির মতো কিছু একটা হয়ে গেলে আর রক্ষা থাকবে না। বাড়িটা শীঘ্র সংস্কার করা দরকার। কিন্তু আর্থিক কারণেই সেটা হয়ে উঠছে না।

একই অবস্থা বড়বাজার এলাকার পালচৌধুরীদের বাড়িরও। বর্তমানে ওই জমিদার পরিবারের কিছু লোকজন এখানেই থাকেন। বাকিরা কলকাতা-সহ বাইরের কোনও শহরে থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময় পালচৌধুরীদের এই অট্টালিকা দাঁড়িয়ে দেখতে হত। আর এখন পুরানো দিনের ক্ষয়ে যাওয়া সেই ইটের স্তূপ রীতিমতো এলাকার মানুষের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে একসময়ের নহবতখানাও। নহবতখানার পাশ দিয়ে চলে যাওযা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে ভয় পান পথচারীরা।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘রাস্তার পাশ দিয়ে যেতেই ভয় লাগে। মনে হয়, এই বুঝি নহবতখানার ইটগুলো গায়ের উপর ভেঙে পড়ল। ক’দিন আগেই তো বিশ্বাসপাড়ায় বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়েছিল। তাছাড়া এখন তো মাঝেমধ্যেই ভূমিকম্প হচ্ছে। পুরসভার উচিত অবিলম্বে এই জীর্ণ বাড়িগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ করা।’’

ওই পরিবারের সদস্য অঞ্জন পালচৌধুরী বলেন, ‘‘যাঁরা এখান থেকে চলে গিয়েছেন তাঁদের অনেকের বাড়ির অংশ বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, কিছু ঘর সত্যিই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ওই ঘরগুলি যাঁরা ব্যবহার করছেন তাঁদের বলেছি সেগুলো সংস্কার করতে।’’ সড়কপাড়া, ভাংরাপাড়া, নাসড়াপারা, চিল্ড্রেনপার্ক, দে-চৌধুরীপাড়া, রথতলা, কোর্টপাড়া-সহ রানাঘাটের বিভিন্ন এলাকায় এ রকম আরও কিছু জীর্ণ বাড়ি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন সেই এলাকার বাসিন্দা ও তাঁদের প্রতিবেশীরাও।

তবে প্রশাসন কিংবা পুরসভা এই বিষয়ে এতদিন চুপচাপ থাকলেও অর্ণবের মৃত্যুর পর কিছুটা হলেও তাদের সক্রিয়তা চোখে পড়ছে। রানাঘাটের মহকুমাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘বিশ্বাসপাড়ার ওই বাড়ির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলার জন্য পুরসভাকে বলা হয়েছে।’’ রানাঘাটের পুরপ্রধান তৃণমূলের পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলোর তালিকা তৈরি করছি। সেগুলো কী অবস্থায় রয়েছে সেটা সরেজমিনে দেখা হচ্ছে। ওই বাড়িগুলো আচমকা ভেঙে পড়ে যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে সেই ব্যপারে যা করার আমরা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন